Contact For add

Sun, Apr 20 2025 - 3:18:05 PM +06 প্রচ্ছদ >> জাতীয়

নৌ নিরাপত্তা প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য দুদকে দিলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়নৌ নিরাপত্তা প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য দুদকে দিলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়

নৌ নিরাপত্তা প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতির তথ্য দুদকে দিলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়
হলি টাইমস রিপোর্ট :
নৌনিরাপত্তা সংক্রান্ত  ইজিআইএমএনএস প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে বড় ধরনের দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। তদন্তের পর সেই দুর্নীতির তথ্যগুলো দুদকে প্রদান করেছে মন্ত্রণালয়টি।
এই প্রকল্পে যে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে তারই ধারাবাহিক একটি দতন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দুদকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছে। সেই সময়ের প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন আবু সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমান অবৈধভাবে পরামর্শক নিয়োগ করেছিল। কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 
গত দশ এপ্রিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পরামর্শক নিয়োগে ১০টি দুর্নীতির অকাট্য তথ্যপ্রমান দুদক’কে প্রদান করেছে (পত্র নং-১৮.০০.০০০০.০২৪.০৬.০০১.১৯.১৩০) । দুর্নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. পদ্ধতি নির্বাচনে কার্যালয় প্রধানের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অনুমোদন গ্রহনের কোনো প্রমানক নোটে নেই।  ২. পিপিআর-২০২৪ এর বিধি ১১০ এর অনুচ্ছেদ-৭ অনুসরণ করা হয়েছে মর্মে নোটে উল্লেখ থাকলেও তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।  এছাড়া তফছিল-৩(ঞ) অংশে প্রদত্ত ফ্লোর চার্ট পরিপালন করা হয়নি। ৩. উল্লেখিত পিপিআর-২০২৪ এর বিধি ১১০ অনুযায়ী সিঙ্গেল সোর্চ হতে ফার্ম সিলেকশন করতে হবে । কিন্তু একাধিক প্রতিষ্ঠানকে আরএফপি ইস্যু করার প্রমান নোটে পাওয়া যায়। ৪. সিএ্যান্ডএফ এজেন্টেকে কি কারনে আরএফপি ইস্যু করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। ৫. ওপেনিং কমিটি এবং মূল্যায়ন কমিটি গঠনে এইচওপিএফ এর অনুমোদনের কোনো প্রমানক নেই।  এ কাজ প্রকল্প পরিচালক স্বয়ং কমিটিগুলো গঠন করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় যা বিধি বহির্ভূত। ৬. সিঙ্গেল সোর্চের ক্ষেত্রে ওপেনিং কমিটির সভা করা যুক্তিযুক্ত নয়।৭.  একই তারিখে ওপেনিং ও মূল্যায়ন সভা এবং প্রতিবেদন তৈরি করা অনিয়ম ও দুর্নীতি।৮. সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান (নির্বাচিত) এর নিগোশিয়েশন,  পারফরম্যান্স সিকিউরিটি গ্রহন, এ্যাওয়ার্ড (এনওএ) প্রদানের কোনো অস্তিত্ব নোটে নেই। ৯. চুক্তি অনুমোদন প্রকল্প পরিচালক করেছেন যা বর্ণিত সেবা ক্রয়ে তার অর্থিক ক্ষমতা বর্হিভূত। ১০. সেবা ক্রয়ে কাযার্দেশ প্রদানের সুযোগ নেই যা প্রকল্প পরিচালকের অদক্ষতা প্রমাণ করে। 
প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার রহমানের ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে পরবর্তী
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরাসরি নৌপরিহবন মন্ত্রণালয় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরির সময়ে অস্বাভাবিক ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার রহমান। তাকে সরাসরি প্রশ্রয় দিয়ে এই প্রকল্পে থেকে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করেছেন সেই সময়ের নৌ সচিব মোস্তফা কামাল। কিন্তু পট পরিবর্তন হলেও সেই লোপাটের টাকা উদ্ধারে যথাযথ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না  অন্তর্বতী সরকার। এদিকে কামাল চলে গেলেও আরেক কামাল সদৃশ্য যুগ্ম সচিব (প্রশাসন)দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দেলোয়ার রহমানকে মদদ দিচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে হোক আর অন্য কোনো কারণে মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন অধিদফতরের চাকরিবিধি লঙ্ঘন এবং শৃঙ্খলা নষ্টে  দেলোয়ার রহমানকে সরাসরি সাপোর্ট দেওয়র অভিযোগ উঠেছে ওই যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে। 
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, নৌ পরিবহন অধিদফতরের ক্যাপ্টেন সাঈদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানকে নৌ মন্ত্রণালয় গত ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর পাবনার মেরিটাইম একাডেমিতে বদলি করে । কিন্তু দেলোয়ার সেখানে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে যোগদান করেননি। এতে চাকরি বিধি লঙ্ঘন এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের দৃষ্টান্ত স্থাপন হয় নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে। যা রাষ্ট্রের শৃঙ্খলাবিধিরও পরিপন্থি ছিল। আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে যে, ওই যু্গ্ম সচিব ক্ষমতার দাপটে চলতি এপ্রিল মাসের ৬ তারিখ দেলোয়ারের পাবনা পোস্টিংয়ের আদেশ বাতিল করিয়ে দেন।  নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:)ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, বিষয়টি জানার পর শৃঙ্খলা ফেরাতে দ্রুত ৭ এপ্রিল তারিখেই ওই আদেশ বাতিল করে দেলোয়ারকে পাবনা পদায়নে বাধ্য করেছেন। 
সামরিক গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক’কে সেই সময় জানিয়েছিলেন, পাবনা মেরিটাইম একাডিমিতে যোগদান না করে ক্যাপ্টেন দেলোয়ার মাঝে মধ্যেই নৌ পারিবহন অধিদফতরে এসে গোপন মিটিং করেন। তার সঙ্গে অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই গ্রুপটি দেলোয়ার রহমানকে ফের নৌপরিবহন অধিদফতরে তার আগের পদে ফিরিয়ে আনতে অপচেষ্টায় লিপ্ত।  
তখনই খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছিল যে, মহাপরিচালক কোনো অফিসিয়াল কাজে নৌ মন্ত্রণালয় বা অন্য কোথাও ভিজিটে  থাকলেই এই গ্রুপটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার ও পরীক্ষক ক্যাপ্টেন কাজী মুহাম্মদ আহসানের  রুমে রুদ্ধদার   বৈঠকে বসেন। এরকম একাধিক বৈঠকের তথ্য পেয়েছেন এ প্রতিবেদক। সেই বৈঠকে দেলোয়ার রহমানের পর  শৃঙ্খলা ভঙ্গে বড় ভূমিকা পালন করেছেন ক্যাপ্টেন এহসান। এসব বিষয়গুলো গত ২৫ ফেব্রুয়ারি হলি টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে এবং পরে বাস্তবেও সেই গোপন পরিকল্পনা কাযকর হতে দেখা গেলো।
নৌপরিবহন অধিদফতর ভবন : ছবি - হলি টাইমস 
 
এদিকে ইজিআইএমএনএস প্রকল্পে যতো দুর্নীতি দেলোয়ার করেছেন তার অন্যতম অংশিদার ছিলেন ডেপুটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার ফরহাদ জলিল বিপ্লব এবং প্রকল্পের সহকারি পরিচালক (অপারেশন) পতিত পবন দাশ । যদিও ফরহাদ জলিল বিপ্লব এ প্রতিবেদক’কে বলেছেন তিনি  এই অধিদফতরের সবথেকে অনেস্ট অফিসার। কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।  কেনো তিনি এতো সৎ অফিসার হয়েও তখনকার প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার রহমানের ক্রমাগত কোটি কোটি টাকার আর্থিক  দুর্নীতিতে বাধা দেননি অথবা মহাপরিচালকসহ নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়কে জানাননি এমন প্রশ্ন করেছিলেন এ প্রতিবেদক। কিন্তু তিনি এর উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। 
নৌ পরিবহণ অধিদফরের এই ইজিআইএমএনএস প্রকল্পটি যেন দুর্নীতিবাজদের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে।  এই প্রকল্পের প্রথম পরিচালক ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন, দ্বিতীয় প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন নাজমুল হক এবং তৃতীয় প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার রহমান সবার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দুদকের মামলায় সাজা হয়েছে নাজমুল হকের। এছাড়াও দুদকে মামলা রয়েছে এমন একজন কর্মকর্তা সুলতান আহমেদকে বিআইডব্লিউটিএ  থেকে পদায়ন করা হয়েছে  এই প্রকল্পে। 
নৌপরিবহন অধিদফতরের অপর দুই শীর্ষ কর্মকর্তা চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টন মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিীন আহমেদ এবং চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সার্ভেয়ার মনজুরুল কবীরের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশনে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। 
 


Comments

Place for Advertizement
Add