
হলি টাইমস রিপোর্ট :
জুলাই-আগস্টে চলা হত্যাযজ্ঞের ফ্যাসিস্ট খুনিরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোতে ক্ষোভ বাড়ছে স্বজনহারা পরিবারগুলোতে। অনেকেই বলেছেন, নতুন স্বাধীনতা পাওয়া গেলেও এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোষররা বিচারের আওতায় আসছে না। এজন্য থানা পুলিশের দুর্বলতাওকে দায়ী করেছেন তারা। আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতা হত্যাকান্ডের অন্যতম সহযোগি আব্দুল রহিম এবং আয়ুব আলীকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখে এমনভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। স্বজনহারানো মানুষেরা এই দুই আসামীকে দ্রুত আটক করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, আশুলিয়ায় যে ভয়াবহ ছাত্র জনতা হত্যাকান্ড হয়েছে তার মূলে যে কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন, যুবলীগ নেতা আব্দুল রহিম এবং আয়ুব আলী। এর মধ্যে আব্দুল রহিম সরাসরি ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন আর আয়ুব আলী ছিলেন অর্থের যোগানদাতা এবং ছাত্র জনতার বিক্ষোভ দমনের পরামর্শক।
আশুলিয়া থানায় ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে ২৫ এবং ৩১ অক্টোবর২০২৪ তারিখে পরপর দুটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় মোসাম্মৎ জলি এবং জুয়েল নামে যে দুইজন বাদি রয়েছেন, তাদের এজাহারে সংঘবদ্ধভাবে যোগশাযসে দাঙ্গা বাধানো, হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মারমিট, নারীর শ্লিলতাহানীসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও হুকুদ দানের অভিযোগ রয়েছে ওই এজাহারে।
অনেক প্রত্যক্ষদর্শী হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক’কে বলেছেন, যারা জুলাই এবং আগস্টের ৪ তারিখ পর্যন্ত ছাত্র জনতার ওপর হামলা, নির্যাতন, হত্যা গুম করেছে তাদের মধ্যে একজন মাস্টার মাইন্ড হচ্ছেন আব্দুল রহিম । আর অন্ধ আয়ুব আলী হাওলাদার হচ্ছেন অর্থের যোগানদাতা ও হুকুমদাতা। ২৫ অক্টোবর তারিখে আশুলিয়ায় থানায় যে মামলা হয়েছে তাতে আব্দুল রহিম ৩৪ এবং আয়ুব আলী ৩৫ নম্বর আসামী। আর ৩১ তারিখে যে মামলাটি হয়েছে তাতে ৯২ নং আসামী হিসেবে আয়ুব আলী হাওলাদারের নাম রয়েছে।
এই দুই ব্যক্তি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের বড় অঙ্কের সুবিধাভুগি। দুর্নীতির মাধ্যমে শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন। যার বৃহৎ অংশ ঢেলেছেন ২৪ এর ছাত্রজনতা আন্দোলন দমনে। দুটি মামলার আসামী হয়েও এই দুই ব্যক্তি এখনো পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ছাত্র জনতা হত্যার ইন্ধন থাকার পরও পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করায় জুলাই শহীদদের পরিবারের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অন্ধ আইয়ুব আলী : ছবি-সংগৃহিত
আয়ুব আলী হাওলাদার অন্ধ হয়ে কি ভাবে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন এমন প্রশ্ন উঠেছেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়েছেন, হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক। তিনি জানতে পেরেছেন, ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় অন্ধ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এই আয়ুব আলী হাওলাদার। এই সংস্থার একটি মার্কেট রয়েছে সাভার শহরে। চার তলা ওই মার্কেটে কমপক্ষে ৫০০ দোকান রয়েছে। সেখান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আসে প্রতিমাসে। এই মার্কেট ঘিরেই কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে অন্য আসামী আব্দুল রহিম। আব্দুল রহিম সাভার যুব লীগের নেতা ছিলেন। আর আয়ুব আলী ছিলেন যুব লীগের স্থানীয় ডোনার। যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক নিখিলের সঙ্গে এই দুজনের একাধিক অন্তরঙ্গ ছবি এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের একত্রে থাকাই প্রমান করে তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল।
তবে সম্প্রতি আব্দুল রহিম মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সাভার বিএনপির যুবদলের নেতা হয়েছেন বলে জানা গেছে। ৫ আগস্টের পর রাতারাতি ভোল্ট পাল্টে ফেলেছেন এই সুবিধাবাদী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট।
হলি টাইমসের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ারও ৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই অন্ধকল্যান সংস্থাটির বর্তমান কমিটি আয়ুব হাওলাদারের নেতৃত্বে চলে। এই কমিটির একজন সদস্য আবু আলম মাতবরকে ডাকাতি এবং সন্ত্রাসীকাজ করার অপরাধে জনতা চোখ তুলে ফেলেছিল। তিনি এখন আয়ুব আলী হাওলাদারের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। এরকম বেশ কয়েকজন দাগী অপরাধী রয়েছে জাতীয় অন্ধ সংস্থায় । শুধু তাই নয়, সংস্থা কারা পরিচালনা করবেন এই ক্ষমতা দখলের দ্ব›েদ্ব গত এক দশকে অন্ধ সংস্থায় খুন হয়েছেন অন্ধ খলিলুর রহমান এবং অন্ধ ইদ্রিস আলী। দুটো খুনের ঘটনায়ই আসামী ছিলেন আয়ুব আলী হাওলাদার।
এদিকে ২০২১ সালে সাভার বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত জাতীয় অন্ধ সংস্থার দ্বিতল মার্কেট বহুতল করে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির করার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল দুদকে। জাতীয় অন্ধ সংস্থার সাবেক সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন এই অভিযোগটি করেছিলেন দুদকে। সম্প্রতি উচ্চ আদালত ওই দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করতে দুদক’কে নির্দেশনা দিয়েছেন।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলের সঙ্গে (কালো চশমা পরিহিত) আয়ুব আলী হাওলাদার । ছবি - সংগৃহিত ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, অন্ধ হলেও আয়ুব আলী হাওলাদারের টাকা এবং পাওয়ার দুটোই ছিল। যে কারনে জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার ওপর যে নৃসংশ নির্যাতন আর হত্যাযজ্ঞ হয়েছে তাতে তার সম্পৃক্ততা থাকারই সম্ভাবনা বেশি।
আয়ুব আলী হাওলাদার যদিও বলেছেন যে, তিনি এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে আওয়ামী যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক নানা কারনে তিনি যোগাযোগ রাখতেন।