
অতিরিক্ত চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের মতো অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। এসডিজি-র লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ৩০% কমিয়ে আনতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার খাদ্যের ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং-এ চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট পরিমাণ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। মোড়কজাত খাদ্যে ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং সংক্রান্ত তথ্য অসংক্রামক রোগ কমিয়ে আনতে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে।
২০ মার্চ ২০২৫, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্টার ফর ল' এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপিএ যৌথভাব সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল,বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সভায় জনস্বাস্থ্য এবং ভোক্তার অধিকার রক্ষায় ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান জানানো হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, দ্রব্যের মোড়কে চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ইত্যাদির মাত্রা সুপষ্টভাবে লেখার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যাতে নিরক্ষর ক্রেতারাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য চিহ্নিত করতে পারে। খাদ্যে কোন দ্রব্যের মাত্রা কতটুকু হবে, কিভাবে হবে এবং কোন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হবে তা সুস্পষ্ট করা জরুরি। এছাড়া এসকল বিধান বাস্তবায়নে নিয়মিত মনিটরিং, সমন্বয় এবং প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স- এর প্যাকেজিং এবং লেবেলিং বিষয়ক গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এবং চিপস এ কোন ধরনের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সতর্কবাণী নেই। প্যাকেটে মোটিভেশনাল বিভিন্ন শব্দের উপস্থিতি রয়েছে। মার্কেটিং সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায় প্রায় শতভাগ দোকানে চিপস এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়ের বিজ্ঞাপন রয়েছে। ৭০ % দোকানী অতিরিক্ত বিক্রির জন্য কমিশন পায়, ৫২ % দোকানে ব্রান্ডের ফ্রিজ এবং ৩৬ % দোকাননে সাইনবোর্ড রয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড. মুজিবর রহমার হাওলাদার। তিনি বলেন সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি। আমাদের দেশে রোগ বাড়ছে, তাই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেতনতার পাশাপাশি আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আতিকুর হক এর সভাপতিত্বে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় বক্তব্য রাখেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, সরকার মোড়কজাত খাবারে চিনি, লবন, ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক তথ্য যুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. খালেকুজ্জামান রুমেল, বলেন, গবেষণায় পাওয়া যায় অতিরিক্ত চিনিযু্ক্ত কিছু পানীয়তে দাতের ক্ষতি হয় এমন সকল উপাদান পাওয়া গিয়েছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-র সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সোয়েব বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন একটি শক্তিশালী আইন। এ আইনের আলোকে মোড়কজাত প্রবিধানমালা করা হয়েছে। তবে আমাদের গবেষণার দেখা যায় অনেক ব্যবসায়ী এ বিধিমালা মেনে চলছেন না। ফ্রন্ট প্যাকেটে লেবেলিং করার বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসী ইনকিউভেটর এর জনাব রুহুল কুদ্দুস বলেন খাদ্যের মান, মোড়ক সংক্রান্ত কার্যক্রমে ক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব দেয়া জরুরি। ব্যারিষ্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, সংবিধানে জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সংবাদিক ও গবেষক সুশান্ত সিনহা বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন বাস্তবায়নের কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত। প্রফেসর ড. সাইদুর আরেফিন নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে নাগরিক সচেতনতার বৃদ্ধির বিষয়ে জোর দেন। ডাঃ অফম সারোয়ার মোড়কের স্বাস্থ্য সর্তকবানী বাংলাদেশের নাগরিকরা বুঝতে পারে সে অনুসারে প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসী ইনকিউভেট, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর, পাবলিক হেলথ ল ইয়ার্স নেটওয়ার্ক, সিটিজেন নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্স, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, কনজুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক হেলথ নিউজ ২৪, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, ভাইটার স্ট্রাটেজিস, সিয়াম, ডাস, পদ্মা, গ্রাম বাংলা, মৌমাছি, কসমস সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন