Contact For add

Thu, Mar 13 2025 - 1:10:42 PM UTC প্রচ্ছদ >>

Billions taka VAT evaded through misuse of central registrationকেন্দ্রীয় নিবন্ধনের অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি

কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি
হলি টাইমস রিপোর্ট :
কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের সুবিধা নিয়ে দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং দোকান মালিকরা কোটি কোটি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এর চরম প্রভাব পড়ছে জাতীয় রাজস্ব বাজেটে এবং অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে।
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রদান সহজিকরনের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নীতি চালু করেছিল। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এটাকে কর ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।  
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে যে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হয়েছে তাতে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।  যে সব ব্যবসায়ী বা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শহর বা নগর অঞ্চলে একাধিক ইউনিট আছে এবং তাদের হিসাব এক জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়, তাদের কেন্দ্রীয় নিবন্ধন করার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। 
সারাদেশে ১২টি ভ্যাট কমিশনারেটে  মোট নিবন্ধিত ইউনিট ৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৪টি। এর মধ্যে ৫ হাজার ৭৯২টি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত, যা নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
হলি টাইমসের অর্থনৈতিক বিভাগের প্রতিবেদকরা সম্প্রতি মিরপুর কর অঞ্চলে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত কয়েকটি দোকান ও প্রতিষ্ঠানের প্রদেয় ভাটের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছেন। 
প্রতিবেদক দলটি দেখতে পেয়েছেন, মিরপুরের শাহআলী অঞ্চলে থাকা, বিপ হোটেল, রসের ফোটা, মুসলীম সুইটস , নিউ মুসলীম সুইটস এবং পরিবহণ সংস্থা নাবিল পরিবহন লক্ষ লক্ষ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে। 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড 
 
বিপ হোটেলের একটি ইউনিট রয়েছে মিরপুর দারুস সালাম রোডের মল্লিক টাওয়ারে। অন্য একটি ইউনিট রয়েছে বনশ্রীতে। এই দুটি ইউনিটই ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের আওতাধীন মতিঝিল ডিভিশনের রামপুরা সার্কেলে ভ্যাট প্রদান করেন। 
নিয়ম অনুযায়ি, বিপ হোটেলের ভ্যাট প্রদানের যাবতীয় বিষয় কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত কর অঞ্চল এবং যেখানে বিপ হোটেলের ইউনিট রয়েছে সেই কর অঞ্চলের রাজস্ব কর্মকর্তা ভ্যাট প্রদানের যাবতীয় তথ্য নিরীক্ষা করতে পারবেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। 
শাহআলী কর অঞ্চলের রাজস্ব কর্মকর্তা ফারুখ মোড়ল হলি টাইমসের প্রতিবেদকদের বলেছেন, এবছরের ২৭ জানুয়ারি তারিখে তার কর অঞ্চল থেকে বিফ হোটেলকে ভ্যাট নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ।   হঠাৎ করে তিনি জানতে পারেন বিপ হোটেল কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের আওতায় মতিঝিল ডিভিশনে ভ্যাট দিয়েছে মাত্র ৫৩ হাজার টাকা। 
মি. ফারুখ বলেছেন, বিপ হোটেলের ইউনিটটি তার নিয়ন্ত্রণাধীন অথচ কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের সুযোগ নিয়ে বিপ হোটেল  বিশাল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছেন। 
মিরপুর-১, মল্লিক টাওয়ারে কসাই খলিলুর রহমানের বড় ছেলের বিফ হোটেল 
হলি টাইমসের প্রতিবেদক আবুল কাশেম ‍অনুসন্ধানে দেখতে  পেয়ছেন বিপ হোটেল সব মিলিয়ে কমপক্ষে সারে ৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। বিপ হোটেলে ১৯ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৫৮,৯৪,৫৩৪ টাকার। ৫ শতাংশ হারে এতে ভ্যাট আসে ৯৪,৭২৬ টাকা। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৩৯,৭৮,৭৬৭ টাকা। এতে ভ্যাট আছে ১,৯৮,৯৩৮ টাকা । এর পুরোটাই ফাঁকি দিয়েছেন। এই সময়ে ভ্যাট ফাঁকি মোট ৪ লাখ ৯৩ হাজার  ৬৬৪ টাকা। এছাড়াও  হোল্ডিং ট্যাক্সও ফাঁকি রয়েছে। 
দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্রে এককালীন অগ্রীম টাকার কোনো উল্লেখ নেই। যে বানিজ্যিক পরিসরে দোকানটি রয়েছে তাতে দোকান ভাড়া কমপক্ষে  দেড় লাখ টাকা হওয়ার কথা সেখানে ভাড়া মাত্র ৭৫ হাজার টাকা। 
এখানে প্রতিকেজি রান্না করা গরুর মাংস বিক্রি হয় ১১৯৯ টাকা । অথচ সাদা ভাত বা বিরিয়ানির সঙ্গে রান্না করা গরুর মাংস কি দরে বিক্রি হয় সেই হিসাব রাখেনা বিপ হোটেল। এতে ক্রেতারা যেমন প্রতারিত হচ্ছে অন্য দিকে বড় অংঙ্কের করও ফাঁকি দিচ্ছে হোটেলটি। 
মি. আবুল কাশেম মনে করেন, ভ্যাট ফাঁকি দিতে যে সব কলা কৌশল নেওয়া  প্রয়োজন তার সবই আছে বিপ হোটেল মালিকের। 
বিপ হোটেলের মালিক সাজ্জাদ হোসেন মূলত আলোচিত সমালোচিত কসাই খলিলুর রহমানের বড় ছেলে। তাদের দুটি দোকানের পুরো মাংস সাপ্লাই হয় উত্তর শাহজাহানপুরের খলিলের মাংসের দোকান থেকে। 
বিপ হোটেলের মালিক সাজ্জাদ হোসেন হলি টাইমসের এ প্রতিবেদক’কে বলেছেন, তিনি কেন্দ্রীয় নিবন্ধন নিতে চাননি। শাহআলীতে তার নিবন্ধন হয়েছে। তিনি শাহআলী কর অঞ্চলেই কর দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার অ্যাডভোকেট তাকে জোর করে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন করিয়েছেন। ভ্যাট তিনিই প্রদান করেন। যে কারনে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়েছি কি-না তা বুঝতে পারছেন না। 
 
 
 
কেন্দ্রীয় নিবন্ধের সুযোগ নিয়ে মোটা অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে মুসলিম সুইট ও রসের ফোঁটা মিষ্টির দোকানের মালিক কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কামরুল হাসানের মালিকানাধীন দারুস সালাম রোডের মুসলীম সুইটস, শাহআলী মার্কেটের রসের ফোটার সাথে লাগানো নিউ মুসলিম সুইট এবং মিরপুর বড় বাজারে অভিজাত মুসলীম সুইট নামে চারটি দোকান রয়েছে। 
এই দোকানগুলো থেকে আগে ২৫, ৩০, ৩৫ এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাট দেওয়া হতো। সম্প্রতি তিনি ওই দোকানগুলোকে কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে গড়ে ১৮ হাজার টাকা হিসেবে শ্যামলী সার্কেলে ভ্যাট দেন। এতে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। শাহআলী রাজস্ব কর্মকর্তা বলেছেন, ওই দোকানগুলোর প্রতিটিতে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভ্যাট পাওনা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় নিবন্ধনের সুযোগ নিয়ে চরমভাবে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। 
হলি টাইমসের অনুসন্ধানে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। শুধু ভ্যাট ফাঁকি নয়, শাহআলী মার্কেটের রসের ফোঁটা মিষ্টি দোকানে পচা বাসি মেয়াদ উত্তীর্ন মিস্টি দই বিক্রি হচ্ছে বলেও প্রমান পাওয়া গেছে।  
এদিকে মালিক কামরুল হাসান মিরপুর বড়বাজারের মুসলীম সুইট দোকানটি ভাড়ায় চালায়। ব্রান্ড নেম, মিস্টি তৈরির জিনিসপত্র সবই তার রয়েছে শুধু চুক্তি ভিত্তিতে অন্য একজন বিক্রি করেন। সেই ব্যক্তির কাছ থেকে ভ্যাট দেওয়ার কথা বলে মাসে ২০ হাজার টাকা নেন কামরুল হাসান। অথচ ওই দোকানের নামে ভ্যাট দেন মাত্র ১৮ হাজার টাকা। বাকি দুই হাজার টাকা নিজের পকেটে ঢুকান কামরুল হাসান। লক্ষ লক্ষ টাকা ভ্যাট ফাঁকির পাশাপাশি এমন প্রতারনাও করেন রসের ফোটার মালিক।  এমনকি তার বড়বাজারের মিস্টির কারখানাটিও বড় ধরনের আগ্নিকান্ডের ঝুঁকি তৈরি করে রেখেছে। কারখানায় কোনো অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা না থাকায় যে কোনো সময় ভয়াবহ আগুন লাগার আশঙ্কা রয়েছে। 
এদিকে পরিবহন সংস্থা নাবিল পরিবহনের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ বছর ভ্যাট না দেওয়ার কারণে এই পরিবহন সংস্থাটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে প্রায় আড়াই ২ কোটি টাকার জরিমানা মামলা হয়েছিল। কিন্তু কি এক অজ্ঞাত জাদুকরি খেলায় নাবিল পরিবহন কর্তৃপক্ষের  সেই জরিমানার হার মাত্র ৮০ লাখ টাকায় নির্ধারণ হয়। তাও আবার কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল পরিবহন সংস্থাটিকে। তারপরই ফের কর ফাঁকিতে মেতে উঠেছে নাবিল পরিবহন। গতমাসে মাত্র ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা ভ্যাট প্রদান করেছেন পরিবহন সংস্থাটি। অথচ কর অফিসের হিসেব মতে কমপক্ষে সাড়ে ৬ লাখ টাকা ভ্যাট হওয়ার কথা। নাবিল পরিবহন কর অফিসকে মিথ্যা দিয়েও বিভ্রান্তি করেছে। মূলত:  এসি গাড়ির  ক্ষেত্রেই ভ্যাট আরোপ করা হয়। নাবিল পরিবহন ভ্যাট তথ্যে ৪ টি এসি গাড়ি থাকার কথা উল্লেখ করেছে। এই ৪ টি গাড়ীর অনুকূলে তারা ভ্যাট প্রদান করে। অথচ পরিবহন সংস্থাটির এসি গাড়ি আছে ১২টি । এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে নাবিল পরিবহন। এমন সুবিধা নিচ্ছে দেশের বিভিন্ন কমিশনারেটে থাকা  একাধিক ইউনিটের ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান। 
রাজস্ব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় নিবন্ধন সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তার অপব্যবহার হচ্ছে। সারা দেশে এই সুবিধা নিয়ে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির পরিমান বেড়েছে। অন্যদিকে অঞ্চল ভিত্তক সার্কেলগুলোর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যহত হচ্ছে। এতে সার্বিক রাজস্ব আহরণ ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। 
 
 


Comments

Place for Advertizement
Add