অস্বাস্থ্যকর ও অপুষ্টিকর খাদ্য সারাবিশ্বে অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাট ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ ডায়বেটিসে বিশ্বে সপ্তম এবং উচ্চ রক্তচাপে দশম স্থানে রয়েছে। দেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের কারণ অসংক্রামক রোগ। দ্রুত স্বাস্থ্যখাতে অসংক্রামক রোগের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আমাদের স্বাস্থ্যখাত হুমকির মুখে পড়বে। ফলে সবধরনের মোড়কজাত খাবার ও পানীয়তে চিনি, লবণ ও ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ সুস্পষ্ট করে উল্লেখ থাকা জরুরি।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সেন্টার ফর ল’ অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত ‘মোড়কজাত খাবারে চিনি, লবন ও ট্রান্সফ্যাটের পরিমাণ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন ।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, আমাদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। চিকিৎসার ৭০ শতাংশ ব্যয় ব্যক্তি বহন করায় তারা দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এসডিজি-র লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ৩০ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অতিরিক্ত চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে মোড়কজাত খাবারে চিনি, লবণ, ট্রান্সফ্যাট ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট ইত্যাদির মাত্রা সুপষ্টভাবে লিখতে হবে। একইসঙ্গে মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা সম্বলিত চিহ্নও দিতে হবে। যাতে নিরক্ষর ক্রেতারাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য চিহ্নিত করতে পারেন।
বক্তারা আরও বলেন , বাংলাদেশে চিনিযুক্ত পানীয় ও খাবারের ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। এসব খাবারে বেশি ক্যালোরি থাকলেও পুষ্টি অনেক কম। ফলে এসব খাদ্য ও পাণীয়তে অতিরিক্ত যোগ করা চিনি ও লবণ একজন ব্যক্তির খাদ্যের মানের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। একটি পানীয়র ক্যানে প্র্রায় ৪০ গ্রাম চিনি বা ১০ টেবিল চামচ পরিমান চিনি থাকে এবং একটি ক্যানে প্রায় ২০০ গ্রাম ক্যালরি থাকে। বেশি চিনি-মিষ্টিযুক্ত পানীয় (এসএসবি) খাওয়ার কারণে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
ওয়েবিনারে বক্তারা আরও বলেন, মোড়কজাত খাবার ও ফাষ্টফুডে খাবার লবণ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এসব খাবারেও বিভিন্ন স্থানে লবণের মাত্রার কমবেশি হতে পারে। লবণ ছাড়াও বেকিং সোডা, মনো-সোডিয়াম গ্লুটামেট, সোডিয়াম নাইট্রেটের মাধ্যমেও মানুষের দেহে সোডিয়াম প্রবেশ করে। সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলেও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি হয়। এমতবস্থায় অসংক্রামক রোগে হ্রাসে বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজন্মকে রক্ষায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। একইসঙ্গে দেশে উৎপাদিত বা আমদানিকৃত মোড়কজাত খাদ্যের মোড়ক ও পাণীয়ের বোতল বা ক্যানে চিনি ও লবনসহ সবধরনের তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী স্পষ্ট করে দিতে হবে।
পাবলিক হেলথ ল ইয়ার্স নেটওয়ার্ক-র সদস্য সচিব ব্যারিষ্টার নিশাত মাহমুদ বলেন, বিদ্যমান আইনের আলোকে দেশে প্যাকেটে লবণ, চিনি, ও ট্রান্সফ্যাট-র পরিমাণ লেখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. ডরিন বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই অসংক্রামক রোগ হ্রাসে মোড়কজাত খাবারে লবণ, চিনি-র পরিমাণ সংক্রান্ত সতর্কবাণী দিচ্ছে। সিএলপিএ আমিনুল ইসলাম গবেষণার জন্য তুলে ধরে বলেন দেশের অধিকাংশ মোড়কজাত খাদ্যের লবণ, চিনি-র পরিমাণ সুপষ্ট নয়।
ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন, ফারজানা আক্তার ডরিন, ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার, ডাব্লিউএইচও; এ কে এম মাকসুদ, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি; শাগুফতা সুলতানা, এইড ফাউন্ডেশন; সহযোগী অধ্যাপক মোঃ বজলুর রহমান, ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি; পলাশ চন্দ্র বণিক, বিইউএইচএস; ফাহমিদা আক্তার, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস, ব্যারিষ্টার নিশাত মাহমুদ, এডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং সদস্য-সচিব, পাবলিক হেলথ ল ইয়ার্স নেটওয়ার্ক; ফারহানা জামনা লিজা, টিসিআরসি; ডা. উম্মে আফরোজা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন; হামিদুল হিল্লোল, ব্যুরো অব ইকোনোমিক রির্সাস; সুশান্ত সিনহা, একাত্তর টেলিভিশন; সৈয়দা অনন্যা রহমান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট; সিটিজেন নেটওর্য়াক- সি নেট, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আ ফ ম সারোয়ার, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স (সিএলপিএ) এর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, সিএলপিএ এর হেড অব প্রোগ্রাম আমিনুল ইসলাম বকুল, পলিসি এনালিস্ট কামরু্ন্নিছা মুন্নাসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মীরা।