Contact For add

Thu, Dec 26 2024 - 7:37:54 PM +06 প্রচ্ছদ >> অপরাধ

Primary and Mass Education Secretary PS Nazmul is the mastermind behind illegal recruitment in the Scout projectস্কাউট প্রকল্পে অবৈধ নিয়োগের মাস্টারমাইন্ড প্রাথমিক-গণশিক্ষা সচিবের পিএস নাজমুল

স্কাউট প্রকল্পে অবৈধ নিয়োগের মাস্টারমাইন্ড প্রাথমিক-গণশিক্ষা সচিবের পিএস নাজমুল
 
হলি টাইমস রিপোর্ট :
অবৈধ ক্ষমতা কাকে বলে তা কাগজে কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রলালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী বা পিএস  মোহাম্মদ নাজমুল হক। মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বা সচিবকে না জানিয়ে কোনো সরকারি নিয়মনীতি না মেনেই নিজেই  নিয়োগ  দেন এই মাস্টারমাইন্ড। 
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের নিয়ন্ত্রন এবং অর্থায়নে পরিচালিত  সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে কাব স্কাউট ৪র্থ সম্প্রসারণ প্রকল্প চালু করা হয়। এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ স্কাউট’কে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৯ সালে প্রকল্পটি চালু করার সময় স্কাউটের পরিচালক মো: রুহুল আমিন এবং উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ’কে যথাক্রমে প্রকল্প পরিচালক এবং উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে  প্রেষনে নিয়োগ প্রদান করেন। এই প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি ১৪ টি বিভাগ এবং কর্মকর্তাদের অনুলিপির মাধ্যমে অবহিত করা হয়।  
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোমলমতি শিশুদের শারিরীক ও মানবিক বিকাশ সাধন এবং দক্ষ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতেই এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্পের শুরু থেকে জনবল নিয়োগ এবং বিভিন্ন প্রকার কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে । প্রকল্পের নেতিবাচক চলমান অবস্থার মধ্যেই চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি তারিখে উপ-প্রকল্প পরিচালক মামুনুর রশিদ’কে প্রকল্প থেকে বাদ দিয়ে স্কাউটের আঞ্চলিক অফিস মৌলভীবাজারে বদলি করে দেওয়া হয়। তখন অভিযোগ ওঠে যে, প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিনের স্বেচ্ছাচারিতা, জনবল নিয়োগে দুর্নীতি এবং বিভিন্নখাতের ব্যয়ের কাগজপত্রে জোড়পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার বিরোধীতা করায় বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহি পরিচালক উনু চিং এবং প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন তাকে প্রকল্প থেকে বাদ দিয়ে মৌলভি বাজার বদলি করেছে। মামুনুর রশিদ তখন বিরোধীতা করলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতিতে জড়িয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুমকি দেন ওই দুই কর্মকর্তা। মামুনুর রশিদকে জানানো হয়, সচিব ফরিদ আহম্মদ’র সম্মতি এবং সচিবের পিএস নাজমুল হকের নির্দেশে তাকে বদলি করা হয়েছে।    যে কারনে তিনি নিরবে নতুন বদলি স্থানে চলে যান। 
 
উপ-প্রকল্প পরিচালককে অপসারণ করার পর বাংলাদেশ স্কাউট একই তারিখে অর্থাৎ ১৭ জানুয়ারি একই স্মারকে (পত্র নং-বা.স্কা.(প্রশা:০২)/১৫৪২(৩৮০)/২০২৪) স্কাউটের উপ পরিচালক গাজী খালেদ মাহমুদকে  উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ  দেয়। যদিও এই নিয়োগ দানের ক্ষমতা কোনো ভাবেই বাংলাদেশ স্কাউটের এখতিয়ারে নেই। প্রকল্পের কোনো কর্মকর্তার নিয়োগ বা বদলি করার ক্ষমতা শুধুমাত্র প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এমনকি পদ  থেকে অপসারণ করার পর ওই পদে নতুন নিয়োগের বিষয়টি বাংলাদেশ স্কাউট সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়কে অবহিত করেনি। সংশ্লিষ্ট  কোনো দফতর বা কর্মকর্তাকেও অনুলিপি প্রদান করা হয়নি। 
ধারনা করা হচ্ছে প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন এবং পিএস নাজমুল হক মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ গ্রহণ করেই এই নিয়োগ দিয়েছেন। এছাড়াও এই ৪০৮ কোটি টাকা প্রকল্প থেকে বড় অঙ্কের টাকা শুধু নয়ছয় করে পকেটভারীর নীল নকশা বাস্তবায়ন করার প্রচেষ্টা রয়েছে এই অসারণ-নিয়োগে। 
এদিকে উপ-প্রকল্প পরিচালককে অপসারন এবং নতুন উপ-প্রকল্প পরিচালকের নিয়োগের বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় দীর্ঘ কয়েক মাস পুরোপুরি অজ্ঞাত থাকার পর নানা মাধ্যমে জানতে পারে। নানা সমালোচনা ও প্রশ্নের মুখে পড়ে বাংলাদেশ স্কাউট। ঠিক তখনই দীর্ঘ ছয় মাস পর নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশ স্কাউট চাপের মুখে পড়লে এই অবৈধ নিয়োগের মাস্টারমাইন্ড সচিবের পিএস নাজমুল রাতারাতি ৩০ জুন তারিখে নতুন একটি নিয়োগের পরিপত্র জারি করে।
নতুন স্মারক (নম্বর:৩৮.০০.০০০০.০০৯.১৪.০০১.২৪.৩৬) নম্বরেও সেই গাজী খালেদ মাহমুদকে উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হয়। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটিও জালিয়াতি করেছেন পিএস নাজমুল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবকে না জানিয়ে কোনো রকম অফিস আদেশ বা নির্দেশনা না রেখে একটি ভূয়া পরিপত্র  তৈরি করে। ৩০ জুনের ওই পরিপত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা সচিবকে সদয় অবগতির জন্য অনুলিপি দেওয়া হয়নি। অনুলিপি দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ স্কাউটকে। এমনকি পরিপত্রে সংশ্লিষ্টদের নামও নেই। এছাড়াও পরিপত্রে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিক (উন্নয়ন)  মোসাম্মৎ নূরজাহান বেগম’কে সদয় অবগতি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে জানা গেছে তিনি বিষয়টি একদমই জানেন না। 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মদ হলি টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি কাব স্কাউটের সম্প্রসারণ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মামুনুর রশিদ’কে অপসারনের বিষয়টি একদমই জানেন না। এছাড়া নতুন কাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাও তিনি বা তার মন্ত্রণালয় অবহিত নন। 
তিনি জানান, প্রকল্পটির অর্থদাতা তার মন্ত্রণালয়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ স্কাউটকে। এজন্য প্রকল্পের নিয়োগ এবং অপসারনের ক্ষমতা একমাত্র মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয় ব্যতীত অন্য কেউ নিয়োগ দিলে তা অবৈধ হবে। 
তিনি হলি টাইমসকে আরো বলেছেন, এই অপসারন এবং নিয়োগের  বিষয়টি তার নজরে এসেছে কয়েক মাস পরে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ স্কাউট যেটা করেছে তা বিধি বর্হিভূত। এজন্য এই প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালকে কেনো অপসারণ করা হলো এবং কেনো মন্ত্রণালয়কে না জানিয়ে নতুন উপ-প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হলো তা জানানোর জন্য বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহী পরিচালক’কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জবাব দেওয়ার জন্য নির্ধারিত সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি তখন পর্যন্ত  নোটিশের কোনো জবাব পাননি। 
এদিকে অতিরিক্ত সচিব মোছাম্মৎ নূরজাহান খাতুন হলি টাইমসকে জানিয়েছেন, পিএস নাজমুল হক পরিপত্রে  তাকে সদয় অবগতির  যে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তা মিথ্যা। ওই পরিপত্রে বিষয়টি থাকলেও সেই পরিপত্র  সেই সময় পর্যন্ত তিনি পাননি। ওটা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ । এটা একটা অপকৌশল। বিভিন্ন সময় তিনি ওই প্রকল্প বিষয়ে নানা অনিয়ম হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ স্কাউটের প্রক্রিয়াটি বৈধ নয়। এজন্য মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। চিঠির উত্তর পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 
বিষয়টি জানতে হলি টাইমসের পক্ষ থেকেও তথ্য অধিকার আইনে বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহী পরিচালক’কে চিঠি  দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত এক মাসেও সেই চিঠিতে থাকা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি।এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহী পরিচালক উনো চিং এবং প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন।  গত ১৭ জানুয়ারি এবং ৩০ জুন তারিখে একই ব্যক্তিকে  একই পদে কেনো দুই বার নিয়োগ দেওয়া হলো তার কোনো ব্যাখ্যা নেই স্কাউটের ওই দুই কর্মকর্তার কাছে। প্রশ্ন উঠেছে ওই ব্যক্তি অর্থাৎ গাজী খালেদ মাহমুদকে যদি ১৭ জানুয়ারি নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে ৩০ জুন তাকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়া লাগবে কেনো। আবার ৩০ জুন তাকে নিয়োগ দেওয়ার আগে কি ১৭ জানুয়ারির নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছিল কি না ? যদি বাতিল না হয় তাহলে পুনরায় ৩০ জুন নতুন নিয়োগ পাওয়া পযর্ন্ত গত ৬ মাসের বেতন তিনি নিয়েছেন কি ভাবে ? যদি খালেদ মাহমুদ ওই ৬ মাসের বেতন না নেন তাহলে সেই বেতনের টাকা তুলে কে কে পকেটে ভরেছেন ? নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছেন, এই অনিয়ম বা দুর্নীতির  মূল পরামর্শ দাতা হচ্ছেন পিএস নাজমুল হক। প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিনের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। দুজনে মিলেই সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের লক্ষ্যটাই বাধাগ্রস্ত করেছেন। যদিও মি.নাজমুল বা রুহুল আমিন কেউই তাদের দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করেন না। 
এই দুর্নীতির বিষয়ে জানতে হলি টাইমসের  প্রতিবেদক একাধিকবার বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহী পরিচালক উনো চিংয়ের সঙ্গে  যোগাযোগ করেছেন।তিনি বলেছেন, লিখিত প্রশ্ন দিতে হবে। তাও দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি কোনো উত্তর দেননি। 
প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিনের ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিপুল সম্পদ অর্জন, বাংলাদেশ স্কাউটের বিদেশে মানব পাচার এবং বিদেশে অবৈধ উপায়ে ব্যবসা করার মতো অনিয়মের খবর রয়েছে হলি টাইমসের কাছে। বিষয়গুলো অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন প্রকাশ করবে হলি টাইমস। 
  
 


Comments

Place for Advertizement
Add