Contact For add

Sun, Dec 1 2024 - 9:28:55 PM +06 প্রচ্ছদ >> অপরাধ

সুইপার ও কবর খোদকের কোটি কোটি টাকার সম্পদ দেখে অবাক দুদকসুইপার ও কবর খোদকের কোটি কোটি টাকার সম্পদ দেখে অবাক দুদক

সুইপার ও কবর খোদকের কোটি কোটি টাকার সম্পদ দেখে অবাক দুদক

হলি টাইমস রিপোর্ট :

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের একজন সুইপার এবং কবর খোদকের কোটি কোটি টাকার ভবন আর আলিশান ফ্লাটের তদন্ত করতে গিয়ে চমকে গেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মাত্র কয়েক বছরে অল্প বেতনের চাকরীতে এতো সম্পদ কি ভাবে করলো তার তদন্ত শেষ করলেও সম্পদ বানানোর গল্প  যেন ভুলতেই পারছেনা সংস্থাটির সংশ্লিষ্টরা।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ এর সুইপার পদে চাকরী করেন খোকন মল্লিক। একই অফিসের আওতাধীনে কবর খোদক বা গ্রেভডিগার পদে চাকরী করেন জসিম হাওলাদার। এ দুই জনই মুলত: মাস্টার রোলের চাকরিজীবী। দুজনেরই চাকরীর বসয় খুব বেশি বছর হয়নি। এই অল্প কয়েক বছরেই  রুপনগর ইস্টার্ন হাউজিং-এ দেড় কোটি টাকায় জায়গা কিনে ছয় তলা একটি বাড়ি করেছেন আর  মিরপুর পল্লবী সি ব্লক তিন নম্বর রোডে দুইজনে কিনেছেন দুটি আলিশান ফ্লাট। এছাড়াও গ্রামের বাড়িতে কিনেছেন জমিজমা। তৈরি করেছেন পাকা বাড়ি।

আলাদ্বীনের চেরাগের মতো তাদের হাতে এমন কি ছিল যে, আট বছরের মধ্যেই কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হলেন তা খতিয়ে দেখছে দুদক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সমাজ কল্যান বিভাগের কর্মচারী হিসেবে খোকন মল্লিক মিরপুর-১২ কমিউনিটি সেন্টারে সুইপারের কাজ করতেন। অন্যদিকে রায়ের বাজার বদ্ধভূমিতে কবর  খোদকের কাজ করতেন জসিম উদ্দিন হাওলাদার। এই দুজনকেই কয়েক বছর আগে প্রেসনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অঞ্চল-২ এ ট্রেড লাইসেন্স শাখায় অফিস সহকারি পদে বদলী করে আনা হয়েছে। সুইপার এবং কবর খোদক কিভাবে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারি মদ মযর্দায় ট্রেড লাইসেন্স শাখায় প্রেসনে অফিস সহকারি হিসেবে কাজ করেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

জসিম হাওলাদার যখন কবর খোদাক হিসেবে কাজ করতেন তখন বকশিষ নেওয়ার নামে উপারি অর্জন করতেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। আর এখন জসিম এবং খোকনের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানের নানা প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত অর্থ  আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ট্রেডলাইসেন্স নিতে হলে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা উপরি অর্থ দিতে হয় এই দুইজনকে। যদিও বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন। 

প্রশ্ন উঠেছে কোটি টাকার সম্পদ গড়তে এই চাকরী ছাড়াও তারা অন্য কি এমন বৈধ ব্যবসা বা কাজ করে যার প্রকাশ্য কোনো হিসেব নেই।  

বিষয়টি নিয়ে হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক কথা বলেছেন মি. খোকনের সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ভবনটি তারা ৫ জনে শেয়ারে জমি কিনে তৈরি করেছেন। পল্লবীর সি ব্লকের ফ্লাটটি তার এক আত্মীয়ের তিনি সেখানে ভাড়া থাকেন। ছাড়াও তিনি জানান, মাস্টার রোলে অফিস সহকারী পদেই তার চাকরী হয়েছে। তিনি ডেসপাস শাখায় কাজ করেন। ট্রেড লাইসেন্স করাতে তিনি কোনো বাড়তি টাকা গ্রহন করেন না।  কেউ যদি এরুপ অভিযোগ করেন তা অসত্য এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছেন, মি. খোকন মিথ্যা কথাই বলেছেন, তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে বাসা ভাড়া দেওয়ার পরে ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মতো স্থানে জমি কেনা অতটা সহজ নয়। তাছাড়া তার আত্মীয় হলেও সেই বাসার ভাড়া কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা। তার বেতন সর্বসাকুল্যে ২৫ হাজার টাকা বেশি হবে না। তাহলে বাসা ভাড়া এবং মাসের খাবর খরচসহ অন্যান্য খরচের টাকা তিনি কোথায় পান এমন প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়াও চাকরী করে যে বেতন পান তা দিয়ে কিভাবে একটি জায়গা কেনার কিস্তি চালিয়েছেন সেই বিষয়টিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখন খতিয়ে  দেখা দরকার।

এদিকে কবর খোদক মি. জসিম উদ্দিন হাওলাদার হলি টাইমসকে জানিয়েছেন, তিনি বৈধ উপার্জনেই জমি এবং ফ্লাট কিনেছেন। তার আয়কর রিটার্ন ফাইলে সব তথ্য দেওয়া আছে। তিনি বার্ষিক কত টাকা আয় করেন কত টাকা রিটার্ন দেন তা অবশ্য হলি টাইমসকে জানাতে অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান কাজে তিনি কোনো ঘুষ বা অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম ইতিমধ্যে তদন্ত করেছে। খুব শিগগিরই সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী দুদক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে বলে জানা গেছে।

মি. জসিম হলি টাইমসকে বলেছেন, তিনি জমি এবং ফ্লাট কিনেছেন স্ত্রীর উপার্জনের টাকায়। তার স্ত্রী মিরপুর-১২’তে একটি বুটিক হাউজের মালিক, ব্যবসা করেন।অবশ্য ওই বুটিক হাউজের ঠিকানা জানতে চাইলে তা দিতে অস্বীকার করেন মি. জসিম। হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক ধারনা করছেন, তার স্ত্রীর বুটিকের ব্যবসা করার বিষয়টি মিথ্যা হতে পারে। প্রকাশ্য ব্যবসা করলে তার ঠিকানা প্রদানে মি. জসিমের অপারগ হওয়ার কথা নয়। একই ধরনের তথ্য তিনি দুদকের তদন্ত টিমকেও দিয়েছেন। আত্মীয় বা মামার ফ্লাট আর স্ত্রীর ব্যবসা নিয়ে যে গল্প এই দুইজনে তৈরি করেছেন তা বেশ চমকপ্রদ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সুইপার এবং কবর খোদকের কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন নিয়ে তদন্ত করার কথা বলেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

 



Comments

Place for Advertizement
Add