হলি টাইমস রিপোর্ট :
চরম প্রভাবশালী প্রকল্প পরিচালক আবু সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানকে অবশেষে পাবনা পাঠানো হয়েছে। নৌ পরিবহন অধিদফতরের ইজিআইএমএনএস প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বেশ কিছু অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন ।
আজ সোমবার ছিল দেলোয়ার রহমানের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে শেষ দিন। তিনি নতুন প্রকল্প পরিচালক বশির আহমেদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে অফিস ছেড়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি পাবনা মেরিন একাডেমিতে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে । নানা কৌশলে তিনি নৌপরিবহন অধিদফতরে থেকে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু নৌ মন্ত্রণালয় বিতর্কীত এই পিডিকে রাখতে আগ্রহী না হওয়ায় পাবনাই যেতে হচ্ছে তাকে।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, যে পদবীতে চাকরী করছেন সেই পদে নিয়োগের সময় কিছু অসত্য তথ্য যুক্ত করেছিলেন দেলোয়ার রহমান । যা নিয়ে তাকে ব্যাপক প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। যে কারনে মি. দেলোয়ারকে পাবনা মেরিন একাডেমিতে পদায়ন করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
সাবেক হয়ে যাওয়া প্রকল্প পরিচালক মি. দেলোয়ার রহমান হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক’কে বলেছেন, শুরু থেকেই এই প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। আমি একটি দুর্নীতিভরা প্রকল্পই পেয়েছিলাম। এখন আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে। তিনি যোগ করেন, আমি চেষ্টা করেছি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে। আমার বিরুদ্ধে যে সব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে বা হচ্ছে তা সত্য নয়। তিনি আরো বলেন, আমি প্রকল্প পরিচালক হতে চাইনি , মন্ত্রণালয় আমাকে জোর করে পিডির দায়িত্ব দিয়েছিলো এখন মন্ত্রণালয় আমাকে রাখেনি, এতে আমার কোনো হতাশা নেই। তিনি এও বলেছেন, যে অবস্থায় তিনি পিডি হয়েছিলেন তাতে প্রকল্পটি মুখ থুবরে পড়ার কথা ছিল । অনেক পরিশ্রম করে প্রকল্প সফল করেছি। নিজের হাতে নৌ পরিবহন অধিদফতরের প্রধান ভবন তৈরি করেছি। এটা আমার সফলতা। এখন যারা আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন তারা মিথ্যা কথা বলছেন। দুর্নাম রটাচ্ছেন।
নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, প্রকল্পটি নিয়ে শুরু থেকেই দুর্নীতিতে মেতে ওঠে প্রকল্প পরিচালকরা। প্রথমে এই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন, ক্যাপ্টেন জসীম উদ্দিন। তার বিরুদ্ধেও ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ। এরপরে পরিচালক হন নৌ প্রকৌশলী নাজমুল হক। তিনি দুর্নীতির মাত্রাকে আকাশচুম্বী করে তোলেন। আটক হন দুদকের হাতে। জেল থেকে জামিন পাওয়ার পর এই প্রকল্পে নিজের দ্বিতীয় বউয়ের নামে ব্যবসা শুরু করেন মি. নাজমুল। ঠিকাদারি কাজেও ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন ওই সাবেক প্রকল্প পরিচালক। এই দুর্নীতির দোষর হয়ে ওঠেন সদ্য অপসারিত পরিকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেম আবু সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমান, ডেপুটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার ফরহাদ জলিল বিপ্লব এবং প্রকল্পের সহকারি পরিচালক (অপারেশন) পতিত পবন দাশ ।
তৎকালীন নৌ প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরীর প্রত্যক্ষ সমর্থন এবং নৌ সচিব মোস্তফা কামালের গভীর সমর্থন থাকায় এই প্রকল্প লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি করা হয় শুধু দুর্নীতির রশদ যোগাতে।
নিরাপত্তাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনায় সমুদ্র উপকূলে ৭ টা লাইট হাউস এবং কন্ট্রোল রুমসহ নৌপরিবহন অধিদফতরের প্রধান ভবন তৈরির পর এস্টাব্লিশমেন্ট অব গ্লোবাল মেরিটাইম ডিস্ট্রেস অ্যান্ড সেফটি সিস্টেম অ্যান্ড ইন্ট্রিগ্রেটেড মেরিটাইম নেভিগেশন সিস্টেমের (ইজিআইএমএনএস) প্রকল্পটি শেষ হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির ক্ষত এখনো দৃশ্যমান এই প্রকল্পের বিভিন্ন স্থাপনায়। প্রকল্প পরিচালককে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নতুন করে অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
প্রকল্পের টাকায় নির্মিত ভবনেও রয়েছে বেশ কিছু সমস্যা। ছবি : হলি টাইমস
এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে যে, প্রকল্প পরিচালক অপসারন হওয়ার পর নতুন করে দুর্নীতির দতন্ত হতে পারে এমন আশঙ্কায় প্রকল্পের তিন কর্মকর্তা দেশ ছাড়তে পারে বলে গুজব উঠেছে। এর মধ্যে বিপ্লব যুক্তরাজ্যে এবং পতিতপাবন দাস মালয়েশিয়ায় যেতে পারেন বলে ধারনা করা হচ্ছে।
নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম (ই) বিএসপি, এনইউপি, বিসিজিএম,বিসিজিএমএস, এনডিসি, পিএসসি, বিএন
এ বিষয়টি নিয়ে হলি টাইমসকে জানিয়েছেন, সরকারি নিয়ম মেনে ওই তিন কর্মকর্তার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ততটা সম্ভব নয়। এমনটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনি জানান, দেলোয়ার রহমানের সরকারি পাসপোর্ট রয়েছে। বিদেশে যেতে হলে তার সরকারি অনুমতি লাগবে। মি. বিপ্লবের নিজস্ব পাসপোর্ট রয়েছে, তারপরও বিদেশ যেতে হলে এনওসি দরকার। যদি তিনি গোপনে বিদেশে না যান তাহলে এটা সম্ভব নয়। পতিত পাবন দাশের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
প্রকল্পের ওই তিন কর্মকর্তাও একই কথা বলেছেন, দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কেউ কেউ এটা রটাচ্ছে সুনাম নষ্ট করার জন্য। তবে মি. বিপ্লব বলেছেন, প্রকল্প শেষ হলে তিনি আর এখানে চাকরী করবেন না এমন চিন্তাভাবনা রয়েছেন। প্রয়োজন হলে বিদেশী কোনো জাহাজে চাকরী করবেন।
এদিকে নৌবাহিনীর কয়েকজন উচ্চ পদস্থ কর্মকতার বিরুদ্ধে একটি অল্পপরিচিত পত্রিকায় ভূয়া ও গাজাখুরি তথ্য সরবরাহ করে মিথ্যা প্রতিবেদন ছাপানোর অভিযোগ তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট একটি অফিস।
ধারনা করা হচ্ছে এই প্রকল্পেরই একজন কর্মকর্তা ওই মিথ্যা তথ্য সরবরাহ এবং প্রতবেদন প্রকাশে অর্থ ঢেলেছে। তারপরেও মি. দেলোয়ারের অপসারণ ঠেকাতে পারেনি। এই বিষয়টি নৌ পরিবহন অধিদফতরে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
দৈনিক হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক বিষয়টি অনুসন্ধান করছেন। আগামীতে বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে।
মহাপরিচালক আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, তিনি এই পদে যতদিন থাকবেন ততদিন নৌ পরিবহন অধিদফতর থেকে দুর্নীতি এবং অনিয়ম দূর করতে সম্ভব সব রকম চেষ্টা করবেন।