হলি টাইমস রিপোর্ট :
নৌ পরিবহন অধিদফতরের নতুন ১১ তলা ভবনের তিন তলার ছাদ ড্যামেজ অবস্থায় ঢালাই করার কারনে অনেকেই ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন । সম্প্রতি বেশ কয়েকবার এই ভবনটিতে আগুন লাগার পর ভবন ব্যবহারেই ভীতি তৈরি হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছেন, ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগারগাঁয়ে নৌ পরিবহন অধিদফতরের যে ১১ তলা ভবন নির্মান করা হয়েছে তাতে বড় ধরনের নির্মান ত্রুটি রয়েছে। শুরুতেই জাল ফায়ার সেফটির সার্টিফিকেট নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়। যা তিন তিনবার আগুন লাগার পর বিশ্বাসযোগ্য প্রমানে পরিণত হয়েছে। তখনই প্রশ্ন ওঠে ভবনটির তিন তলার ছাদ নির্মানে গাফিলতি নিয়ে। অভিযোগ ওঠে ভবন নির্মানে ব্যাপক দুর্নীতির।
হলি টাইমসের হাতে থাকা বেশ কিছু তথ্য প্রমানে দেখা গেছে, তিন তলার ছাদ ঢালাই দেওয়ার সময় বৃষ্টির পানি জমে ছাদের বড় অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ড্যামেজ হয়ে যায় তিন তলার ছাদের বড় অংশ। ওই ড্যামেজ অবস্থা বজায় রেখে চার তলার ছাদ ঢালাই দিতে প্রস্তুত হলে অধিদফতরের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলো। ডাকা হয় টেকনিক্যাল টিম’কে। প্রকল্পের অথরাইজড পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আনসি টেকনোলজি (ANSE Technologies) ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সামহী কনস্ট্রাকশনকে ( Samhee Construction) বুয়েট থেকে ছাদের ক্ষতিগ্রস্থ অংশের কোর টেস্ট( CORE TEST) করতে নির্দেশন দেন। বুয়েট প্রকৌশলীরা ছাদের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ নিয়ে পরপর তিনটি কোর টেস্ট করে। কোর টেস্টের ফলাফল ছিল নেতিবাচক । এরপরই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অধিকতর টেস্ট করার পরামর্শ দেন । ওই পরামর্শে বলা হয়, চার তলার ছাদ ঢালাই দেওয়ার আগেই তিন তলার ছাদ রিপেয়ার করতে হবে। সে জন্য কিছু লিখিত টেকনিক্যাল পরামর্শ প্রদান করে আনসি টেকনোলজি। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক সেই পরামর্শ গ্রহন করেননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামিহ্ কনস্ট্রাকশান অতিরিক্ত টাকা ব্যয় হবে এই কারনে বড় ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। এই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্প পরিচালক দেলোয়ার রহমানের সঙ্গে আতাঁত করে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ফার্ম শহীদুল্লাহ এসোসিয়েটস থেকে তিন তলার ছাদে রিপেয়ার প্রয়োজন নেই এমন একটি প্রত্যয়ন সংগ্রহ করেন। ওই প্রত্যয়নের জোরেই ড্যামেজ অবস্থায় ঢালাই দিয়ে বাকি তলাগুলোর কাজ সম্পন্ন করা হয়।
প্রকল্পের বিধি অনুযায়ী অথরাইজড পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নেওয়া যাবে না। এই নিয়ম ভঙ্গ করেছে প্রকল্প পরিচালক মি. দেলোয়ার রহমান। তার দুর্নীতির কারনে পরবর্তীতে টাইলস ফিটিংয়ের সময়েই তিন তলার ছাদ দিয়ে পানি লিক করার বিষয়টি দেখতে পায় কর্মকর্তারা। নৌ পরিবহন অধিদফতরের অনেকেই দেখেছেন টাইলস ফিটিংয়ের সময় তিন তলার ছাদ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ার দৃশ্য। তাদের আশঙ্কা ছাদের পানি যদি কনসোল ইলেট্রিক ওয়ারিংয়ের প্রবেশ করে তাহলে মারাত্মক অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এমনিতেই কয়েকদিনের ব্যবধানে ভবনটির সাত তলা এবং ৬ তলায় তিন তিনবার আগুন লেগেছে। যদিও বড় ধরনের কোনো প্রাণহানি বা সম্পদ হানি হয়নি। তবে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে, আগুনে যে কোনো সময় পুরো ভবনটিকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে।
নৌ পরিবহন অধিদফতরের নতুন ভবন । ছবি : হলি টাইমস
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে নৌ পরিবহন অধিদফতরের কয়েকজন কর্মচারি হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক’কে বলেছেন, তারা ভীতির মধ্যে আছেন। একদিকে আগুন লাগার আশঙ্কা অন্যদিকে তিন তলার ছাদ ধসে পড়ার ভয়। এই দুটি দুর্ঘটনার একটিও যদি ঘটে তাহলে ব্যাপক প্রাণহানি এবং সম্পদ হানির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক। মি. দেলোয়ার হলি টাইমস’কে বলেছেন, তিনি ভবনটির তিন তলার ছাদ তৈরির সময় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদান করেননি। তার আগে ক্যাপ্টেন ফরহাদ জলিল বিপ্লব যোগদান করেছেন। তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে মি. দেলোয়ার রহমান অভিযোগের মতো করেই বলেছেন, মেহেদি নামে স্থাপনা কনসালটেন্ট ছিলো ANSE এর লোকাল পার্টনার । সে কোরিয়ান কন্ট্রাক্টর সামি এর কাছে টাকা চেয়েছিল শুনেছিলাম, পরে ANSE তাদের সাথে চুক্তি বাতিল করে। তাঁরা কিছু লিখতে পারে। তবে এইগুলো আমার সময়ে ঢালাই না।
মি. বিপ্লব বলেছেন, তার দায়িত্বে ছাদ ঢালাই হয়নি। তিনি তখন ডিপিডি ফিন্যান্সের দায়িত্বে ছিলেন। তখন পিডি ছিলেন ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন এবং অবকাঠামো তদারকির দায়িত্ব ছিল ক্যাপ্টেন আবু হায়াত আশরাফুল আলম এবং রিয়াজ উদ্দিন আহমদের ওপর।
প্রতিবেদক আশরাফুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ওই সময় পিডি হিসেবে ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন দায়িত্বে ছিলেন। তিনি এবং রিয়াজ উদ্দিন তদারকি করেছেন। তারা সবাই তিন তলার ছাদ পুন: ঢালাই বা রিপেয়ারিং করার কথাই বলেছেন। কিন্তু ওই সময় ক্যাপ্টেন জসিম উদ্দিন অবসরে চলে যান এবং দেলোয়ার রহমান পিডি হিসেবে যোগ দেন।পিডি দেলোয়ার রহমানকে অথরাইজড কনসালটেন্ট দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় পরমার্শ নেওয়ার অনেক তাগাদা দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি তা শোনেননি। উল্টো একটি আনঅথরাইজড ব্যক্তি ফার্ম থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়েছেন যা এই প্রকল্পের আইন বিরোধী।যে কারনে ভবনের কোনো ক্ষতি হলে তার দায় দায়িত্ব পিডি দেলোয়ারকেই নিতে হবে।
তবে প্রকল্প পরিচালক মি. দেলোয়ার রহমান জোর দিয়ে বলেছেন, তিন তলার ছাদের ঢালাই টেকসই হয়েছে। মান সম্মত হয়েছে। ধসে পড়ার কোনো ভয় নেই।
নৌ পরিবহন অধিদফতরের এই ভবন নির্মানে অনিয়ম করা ছাড়াও ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে এমন সংবাদ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।