স্বাস্থ্যসেবা খাতে নানা প্রতিষ্ঠান ও পরিধি বৃদ্ধি পেলেও আইন, নীতিমালার সংস্কার ও উন্নয়ন সে অনুসারে হয়নি। আইনের দূর্বলতার কারণে মানসম্মত আর মানহীনদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার মানহীনদের ভোগান্তির দায় সকলকে বহন করতে হচ্ছে। আইনের সীমাবদ্ধতা, নজরদারির অভাব, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি/SOP) না থাকাসহ নানা কারণে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো মানুষের আস্থা হারাচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি প্রণয়নের কাজ দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকলেও এখনো সম্পন্ন করা যায়নি। এ আইনকে দুর্বল করতে স্বার্থান্বেষীরা সক্রিয় রয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইন না থাকায় স্বাস্থ্য সেবা আজ বাণিজ্য পরিণত হয়েছে এবং চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। সরকারকে সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্য সেবার জন্য পুর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করা জরুরি। ০১ অক্টোবর ২০২৪ অনলাইনে স্বাস্থ্য আন্দোলন, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা আয়োজিত সভায় এ আহবান জানানো হয়।
সভায় সিএলপিএ-র প্রোগ্রাম উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুলেরর সঞ্চালনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সভায় বক্তব্য রাখেন সামিয়া আফরিন, জনস্বাস্থ্য বিশেষ্ণগ, নারী পক্ষ, ডাঃ ফখরুল ইসলাম খালেদ, সহযোগী অধ্যাপক, এসএমএমইউ, ব্যারিষ্টার নিশাত মাহমুদ, সদস্য-সচিব, পাবলিক হেলথ ল ইয়ার্স নেটওয়ার্ক, ডাঃ রশিদ ই মাহবুব, জনস্বাস্থ্য বিশেষ্ণগ, প্রফেসর ফিরোজ আহমেদ, সভাপতি, ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রেমেন্ট, ডাঃ মাহবুবুর রহমান রাফি, সহযোগী অধ্যাপক, এসএমএমইউ, বজলুল রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ডাঃ সাকলাইন রাসেল, বারডেম, আমিনুল ইসলাম রিন্টু, ডাস, হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, বিএনটিটিপি, মেজবাহ সুমন, সাধারণ সম্পাদক, পবা ।
প্রবন্ধে সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সাথে প্রায় ৪৫টি আইন জড়িত The Medical Practice and Private Clinics and Laboratories (Regulation) Ordinance, 1982’ আইন, ভোক্তা অধিকার আইন, দন্ডবিধিতে কতিপয় ধারায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার কিছু বিধান রয়েছে। এ আইনগুলোর কোনটিই পুর্ণাঙ্গ নয়। আর এ বাস্তবতায় স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সেবা গ্রহীতার সুরক্ষা প্রদান এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা জরুরি।
তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মেডিক্যাল নেগলিজ্যান্স/ চিকিৎসা অবহেলার বিষয়গুলো আইনে যুক্ত করার সুপারিশ করেন। চিকিৎসা অবহেলা চিহ্নিত করতে হাসপাতাল/চিকিৎসা সহায়তা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব, চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সহায়তাকারী, উপকরণ সরবরাহকারী, রোগী, রোগীর এটেনডেন্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুনির্দিষ্ট করা উচিত বলে মতামত দেয়া হয়। অন্যথায় চিকিৎসা অবহেলার দায় শুধু চিকিৎসদের উপর আসবে।
বক্তারা আইনে পাবলিক হাসপাতাল স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার পৃথক সংজ্ঞা ও সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি সরকার যাতে প্রয়োজনে পাবলিক হাসপাতালকে বিশেষ সুবিধা দিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা, রোগীর সুরক্ষায় ও চিকিৎসা অবহেলা নিরুপনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, স্বাস্থ্যসেবায় খাদ্য, ঔষধ মালামাল, উপকরণ সরবরাহকারীর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা, চিকিৎসা ব্যয় কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা, চিকিৎসা ব্যয় কমাতে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম যুক্ত করা, স্বাস্থ্য সেবার মান ও যথার্থতা পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন, রেফারেল ইত্যাদি বিধান যুক্ত করা, ডিজিটাল রেজিষ্টার ব্যবস্থার বিধান রাখা, জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত অভিযোগ প্রদানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা কমিটি গঠন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রশাসনিক জরিমানা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা, পরিবেশ আদালত-ঔষধ আদালতের মতো স্বাস্থ্যসেবা আদালত গঠন এবং সাধারণ নাগরিকদের সহজে অভিযোগ ও মামলা দায়ের করার ক্ষমতা প্রদান করার সুপারিশ করেন।
বক্তারা বলেন, সমন্বিত একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করা গুরুত্বপূর্ণ একটি জনদাবি। এ আইনে যেন সবার অধিকার রক্ষা করা হয়, একইসঙ্গে অধিকার লঙ্ঘনকারী ও দায়িত্ব অবহেলাকারীকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার সুযোগ থাকে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।