শিশুদের যৌন শোষণের মাত্রা, পরিধি এবং প্রেক্ষাপটের উপর আলোকপাত করে এবং বাংলাদেশে শিশুদের যৌন শোষণ দূর করার জন্য করণীয় নির্ধারণে ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ‘‘অংশীজন সংলাপ’’ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) এর আয়োজনে ডাচ মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, নেদারল্যান্ডস এবং ফ্রি অ্যা গার্লের সহযোগিতায় ডাউন টু জিরো অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (স্টেপিং আপ দ্য ফাইট অ্যাগেইনস্ট চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাক্সপ্লয়টেশন) প্রকল্পের আওতায় এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকল্প সমন্বয়কারী সুব্রত কুমার পালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে এসিডি নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এবং সভাপতিত্ব করেন।
অংশীজন সংলাপে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার শিশুর জন্য একটি মানবিক পরিবেশ তৈরিতে বদ্ধ পরিকর। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের সঙ্গে সংগতি রেখে শিশুর মেধা বিকাশে কাজ করছে। তারপরও আমরা শিশুর উপর সহিংসতা ও যৌন শোষণের চিত্র অনেক সময় দেখতে পাই। শিশুদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
তারা আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য নিশ্চিত করতে সব শিশুর জন্য নিরাপদ আবাস গড়ে তোলার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
অন্যদিকে এসিডি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর শারমিন সুবরিনা সরাসরি অংশগ্রহণকারীদের সামনে প্রকল্পের লক্ষ্য এবং কর্মসূচীর কাঙ্খিত প্রত্যাশা তুলে ধরেন। অংশীজন সংলাপে বাংলাদেশের শিশুদের যৌন শোষণের মাত্রা, পরিধি এবং প্রেক্ষাপটের উপর আলোকপাত করে এবং বাংলাদেশে শিশুদের যৌন শোষণ দূর করার জন্য করণীয়সহ সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরা হয়। শিশুর প্রতি যৌন শোষণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তা, অভিভাবক, ধর্মীয় নেতা, বিবাহ নিবন্ধক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শিশু কল্যাণ বোর্ড, শিশু, আইনজীবী, সাংবাদিক, ভিকটিম সহায়তা কেন্দ্র, শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির সঙ্গে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে সালীমা সারোয়ার বলেন, শিশুদের জীবনে মা-বাবার প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। জীবনের শুরুতে শিশুরা মা-বাবা বা অভিভাবকের কাছ থেকেই শিক্ষা নেয়। কিন্তু এখানেই যদি বাধা বা চাপের সম্মুখীন হয় তাহলে তার সঠিক মানসিক বিকাশ রুদ্ধ হয়। আমরা এগিয়ে চলেছি। তবুও সমাজে শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। ২০১৫ সালে বিশ্ব দরবারে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) চুড়ান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমরাও তাদের সহযাত্রী। তাই সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অংশীজন সংলাপে অন্যান্যদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন রাজশাহী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মনজুর কাদের, সোনার দেশ সম্পাদক আকবারুল হাসান মিল্লাত, বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার ড. আইনুল হকসহ বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা শিশুর উপর যৌন শোষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা, কেন শিশুর উপর যৌন নির্যাতন বাড়ছে তা নিয়ে গবেষণা করা, অনলাইন অপব্যববাহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শিশু বিবাহ বন্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের উচিত একটি শক্তিশালী এবং স্থায়ী ব্যবস্থা স্থাপন করা যাতে শিশু এবং বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা শিশুদের যৌন শোষণ সম্পর্কিত কার্যকলাপের নীতি প্রণয়নে এবং মূল্যায়নে অংশগ্রহণ করতে পারে।