সারা বছর জেলেরা অপেক্ষা করে ইলিশের মৌসুমের জন্য। কিন্তু এ বছর ইলিশের মৌসুম আসলেও মুখে হাসি নেই জেলেদের মুখে। ফলে সাগর থেকে ফিরে আসার পর আগে যে উৎসবের আমেজ ছিল জেলে পল্লীতে তা এখন আর নেই। কারণ কাঙ্খিত রূপালী ইলিশ ধরা দিচ্ছে না জালে। পূর্ণিমার জো’তে ইলিশ ধরা দিলেও অমাবস্যার জো’তে ইলিশ যেন হারিয়ে গেছে একদম। ইলিশের মৌসুমে প্রায় তিনমাস সরগরম থাকতো জেলে পল্লী ক্রেতা-বিক্রেতা আর আড়তদারদের ভিড়ে। তবে এবার ইলিশ ধরা না দেওয়াতে জেলেদের কপালে উঠেছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৩ জুলাই থেকে সাগরে নামতে শুরু করে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। চলতি মাসের শুরুতে প্রথম পূর্ণিমার জো’তে আশানুরূপ ধরা দিয়েছিল রূপালি ইলিশ। এ সময় নিষেধাজ্ঞার সময় যে কষ্ট ছিল তা মুহূর্তেই উধাও হয়েছিল। কিন্তু এরপর অমাবস্যার জো’তে এসে জালে আর ধরা দিচ্ছে না মাছ, ফলে উধাও হয়ে যায় আমাদের হাসি।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় অন্য বছরের তুলনায় চলতি বছরে ইলিশ কম আসছে। যার কারণে জেলেরা ইলিশ সেভাবে পাচ্ছে না এখনো। তবে মধ্যঞ্চলীয় এলাকায় ইলিশ ভালোই পাওয়া যাচ্ছে। আগে মে, জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টি হত, এখন আগস্ট মাসে এসে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা। এখনো সামনে বেশ কয়েকটি জো রয়েছে। আশা করছি, সামনে জেলেদের জালে আবারও ইলিশ ধরা পড়বে। এই মুহূর্তে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না তা বলা যাবে না।
উপকূলীয় বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সাগর থেকে জেলেরা নৌকায় করে অল্প কিছু মাছ নিয়ে আসছেন। আর তা দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। তবে দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। পরে পাইকারদের হয়ে এসব মাছ চলে যাচ্ছে বিভিন্ন বাজারে।
জানা যায়, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, কর্ণফুলী উপজেলা ও নগরীর ২৭ হাজার জেলে নিয়মিত সাগরে মাছ ধরে থাকেন। ছোট বড় মিলে প্রায় ৫ হাজার ফিশিং বোট সাগরে চলাচল করে। এরমধ্যে উপকূলীয় এলাকার জেলেদের অধিকাংশ নৌকা বছরের বেশির ভাগই সময় সাগরে যায় না। শুধুমাত্র ইলিশের মৌসুম আসলে এসব নৌকা করে জেলেরা সাগরে যায়। বাকি সময়ে এসব জেলেরা ধারদেনা করে সংসার চালান এবং নৌকা ও জাল মেরামত করে সাগরে নামেন। ইলিশ পেয়ে তা বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করেন উপকূলীয় এলাকার জেলেরা। তবে ইলিশ জালে না আসার কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছে এসব জেলেরা ও তাদের পরিবার।