উচ্চ শিক্ষিত হয়েও নিজ দেশে ভালো চাকরি না পেয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন সাতক্ষীরার হাফিজুর রহমান। সেখানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। ৫২ দিন পর দেশে ফিরলো তার মরদেহ।সোমবার (৭ আগস্ট) বিকালে বিমানবন্দর থেকে নিজ বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কৃপারামপুর গ্রামে তার মরদেহ নিয়ে আসা হয়। কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।হাফিজুর রহমান কলারোয়ার ননএমপিওভুক্ত ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক হিসেবে ১৬ বছর শিক্ষকতা করেন। সেখানে বেতন না পেয়ে পাড়ি জমান সৌদি আরব।
হাফিজুর রহমানের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শেষবারের মতো একনজর দেখতে আসেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
নিহতের পরিবার জানায়, দেশে ভালো কিছু করতে না পেরে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর হাফিজুর সাড়ে ছয় লাখ টাকা দিয়ে সৌদি আরব যান। সেখানে ভালো বেতনে কাজের আশ্বাসও পান। অথচ চলতি বছরের গত ১৭ জুন সৌদি আরব থেকে খবর আসে হাফিজুর আর নেই।
তারা আরও জানান, সেখানে যাওয়ার পাঁচ মাসে কোনো কাজ না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয়েছে। বাড়ি ফেরার আকুতি জানালেও মানবপাচারকারী ওই চক্রটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি বাড়ি ফেরার জন্য আরও এক লাখ দশ হাজার টাকা নিয়েছিল। তারপরও তাকে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়নি। পরিবারের অভিযোগ হাফিজুর ওই দালাল চক্রের কুকীর্তি জেনে ফেলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। শোকাহত পরিবারের দাবি মানব পাচারকারী দালাল চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি বিভাগ ওয়েজ অনার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে মরদেহ দেশে ফিরে পেয়েছে তারা। মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনায় সরকারের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন পরিবারের সদস্যরা।
নিহতের মা রিজিয়া খাতুন জানান, আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। দালালদের ফাঁসি চাই।
নিহতের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বলেন, নির্মমভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে দালাল মোখলেছুর রহমান ও তার সৌদীর বস। ভালো কাজের কথা বলে সেখানে পৌঁছানোর পর দেওয়া হয় খারাপ কাজ। দেশে ফিরে আসলে তাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসবে, তাই পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ ঘটনায় সৌদি প্রবাসী দালাল মোখলেছুর রহমান খাঁসহ তার ভাই ও তার বাবাকে আসামি করে নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় মোখলেছ খাঁ ও তার ভাই কারাগারে আছেন। আর তার বাবা নাসির উদ্দীন খাঁ উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।