হলি টাইমস রিপোর্ট:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, অনেকগুলো কাজের প্রতিফলনের মাধ্যমে মানুষের সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তার মধ্যে ভাস্কর্যবিদ্যা অন্যতম। ভাস্কর্য হলো সৃজনশীল শিল্পকর্ম বিকাশের শক্তিশালী মাধ্যম। এটি মানুষের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে। তাই এটি মানবীয়। দানবীয় বা অশরীরী শক্তির মাধ্যমে এটি হয়নি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মানবীয় সভ্যতার এসকল প্রতিফলন ধ্বংস হয়েছে দানবীয় শক্তির হাতে। আর সেগুলোকেই হয়তবা আধুনিক সভ্যতায় বলা হয় অপশক্তি৷ মানবতার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া এখন সময়ের দাবি।
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত এক মানববন্ধনে উপাচার্য এসব কথা বলেন৷
উপাচার্য বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই মূল্যবোধগুলোর প্রতি যারা সম্মান দেখাতে জানেন না তারা বোধহয় বড় আকারের ভুল করছেন। সভ্যতা বিধ্বংসী যেকোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠিন হওয়াটা খুবই বাঞ্ছনীয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের মতো অনভিপ্রেত ঘটনাকে সামগ্রিকভাবে বহু মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিরোধ করতে হবে।’
এসময় তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী, অশুভ চক্র যারা ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরি করে সভ্যতা ও মানবতার বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক। একইসাথে এদের পছনে ইন্ধনদাতা অশুভ চক্রদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
আখতারুজ্জামান বলেন, ‘অপশক্তিরা সংখ্যায় বেশি নয়। এই দেশের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ আছে। কিন্তু একই সঙ্গে মানবিক এবং অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধও তাদের মাঝে গভীরভাবে প্রোথিত। সুতরাং সেই মানুষগুলোর যখন জাগরণ ঘটবে তখন স্বল্পসংখ্যক অশুভ চক্রের সদস্যরা কিন্তু বিকল্প কোনো পদ পাবে না। তাই এখনই এদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি স্থাপন করা খুবই জরুরি।’
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানেই আধুনিক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। বঙ্গবন্ধুর বিরোদ্ধে দাঁড়ানো মানে দেশে বিদেশে যে ইসলামি সভ্যতা আছে সেটির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো৷ এই বাবুনগরী ১৯৭১ সালে জাতির পক্ষে তো দাঁড়ায়নি বরং বিরোধিতা করেছে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে ধর্মান্ধ এই গোষ্ঠী বাঙালির কৃষ্টির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বারবার পরাজিত হয়েছে। এসকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অতীতে দাঁড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে।’
রাজনীতি করা যায় কিন্তু কোনো মৈালিক বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে না দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড রহমতুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। আর কেন এটি স্বাধীন হয়েছে, এর লক্ষ্য কী সেটা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা নিষ্পত্তি করেছি। এখানে নতুন করে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। আজকে উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে রাষ্ট্র যেভাবে সহযোগিতা করেছে সহনশীলতা এবং উদারতার দৃষ্টিতে দেখেছে তারা কখনোই সেটাতে সন্তুষ্ট হয়নি। দিন শেষে তারা খেলাফতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় উন্মত্ত। এগুলোর বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করার কোনো সুযোগ নেই।’
মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড নিজামুল হক ভূইয়ার সঞ্চালনা এবং সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। #