হলি টাইমস রিপোর্ট:
ইতিহাস আর ঐতিহ্য নিয়ে সু-পরিচিতি রাজধানী ঢাকার খুব কাছেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা। উপজেলার মাত্র আট কিলোমিটার উত্তর পার্শ্বে বারদী ইউনিয়নে যে কোনো সময় ঘুরে আসতে পারেন উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক সাধক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম।
হিন্দু সম্প্রদায়ের এই জনপ্রিয় তীর্থস্থানটিতে প্রকৃতির নিবিড় সজীবতায় আর আধ্যাত্মিক নিস্তব্ধতায় পরম ঈশ্বরের আরাধনায় মগ্ন হতে আসেন ভক্তরা।
আশ্রমের মূল ফটকের সামনে রঙিন ছাতায় ঘেরা ছোট ছোট দোকানগুলোতে মিষ্টির ও প্যারা ছাড়াও পাওয়া যাবে শিশুদের খেলনা, মোম, আগরবাতি, স্টিল ও পিতলের সামগ্রী এবং শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বিভিন্ন ছবি। এ ছাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পূজা-অর্চনার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিও মিলবে এসব দোকানে।
ছোট ছোট দোকানগুলো পেছনে ফেলে সিঁড়ি ভেঙে মূল আশ্রমে গেটে প্রবেশ করে হাতের ডান দিকে দেখতে পাওয়া যায় আধুনিক ডিজাইনে নির্মিত ও মূল্যবান পাথরে সুসজ্জিত মহাসাধক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সমাধি মন্দির। সমাধি মন্দিরের পূর্বদিক ঘেঁষে রয়েছে জানকীনাথের আরেকটি মন্দির।
আশ্রম সূত্রে জানা যায়, জানকীনাথ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। উত্তর দিকে দুর্গা মন্দির ও স্মৃতি মন্দিরের দেখা পাওয়া যাবে। মূল মন্দির থেকে পূর্ব-উত্তর কোণে এক বিশাল নাটমন্দির। এ নাটমন্দিরে প্রতি বছর ১৬ অগ্রহায়ণ এ কীর্তন হয়। নাটমন্দিরে দক্ষিণ পার্শ্বে বিশাল পুকুর। ইমারতের ঘেরার মধ্যখানে আধুনিক ডিজাইনে নির্মিত শিব মূর্তি। সাধকের মূল আসনটি আস্তানার মণিকোঠায় অবস্থিত। এ আসন মন্দিরে সাধক লোকনাথ তার ভক্তবৃন্দের সঙ্গে নানা সুখ-দুঃখের আলোচনা করতেন। নিদ্রা-আহার ও ধ্যানের স্থানও ছিল এটি।
বর্তমানে লোকনাথ বাবার মন্দিরের সম্মুখে বিশাল একটি বকুল ও ৪/৫টি আম গাছ রয়েছে। পুরো আস্তানা ছায়াময় হয়ে রয়েছে বিভিন্ন জাতের গাছ-গাছালিতে। ৪/৫টি তিনতলা ভবন সহ অতিথি শালা, ধর্মশালা, অফিসকক্ষ, বিক্রয় কেন্দ্র, গোশালা, রন্ধনশালা, পূজামণ্ডপ ইত্যাদি রয়েছে। পাশেই রয়েছে বারদী দৃষ্টি নন্দন মহাশ্মশান ।
১২৯৭ বাংলা সালে ১৯ জ্যৈষ্ঠ শুক্ল পক্ষের ত্রয়োদশী বেলা ১১টা ৪০মিনিটে ১৬০ বছর বয়সে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সোনারগাঁয়ে বারদীতে দেহত্যাগ করেন। সেই থেকে প্রতি বছর ১৯ জ্যৈষ্ঠ পালিত হয়ে আসছে উৎসব।
এ উপলক্ষে আশ্রম প্রাঙ্গণে বিশাল মাঠে ৩দিনব্যাপী মেলা হয়। এতে দেশের হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে হাজার তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটে থাকে এখানে। আশ্রমে সন্ন্যাসী এবং তীর্থযাত্রীদের জন্য যত দিন ইচ্ছা থাকা-খাওয়ার ফ্রি ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও প্রতি শুক্র ও শনিবার এখানে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন এবং বিশেষ দিনে উপবাস পালন করেন।
আশ্রমের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব সাংবাদিক শ্রী শংকর কুমার দে জানান, শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী বাবার জীবন বৃত্তান্ত থেকে জানা যায়, তিনি ১১৩৭ বাংলা সালের ভাদ্র মাসে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বশিরহাঠের চৌরাশি চাকলার অন্তর্গত কচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১২৭০ বাংলা সালে ত্রিপুরা থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পাহাড়ে কিছুদিন অবস্থানের পর সোনারগাঁও উপজেলার (তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ মহকুমার বৈদ্যের বাজার থানা) বারদী গ্রামে আসেন। সীতাকুণ্ড থেকে এই যোগ সিদ্ধ মহাপুরুষকে বারদীতে নিয়ে আসেন এক খুনের মামলার আসামি ডেঙ্গু কর্মকার।
তিনি আরও জানান, বারদীতে শ্রী শ্রী লোকনাথ বাবার আসন বা ধ্যান মন্দির, এখানে সমাধি থাকার কারণে এখানকার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের তুলনা করা যায় না। শ্রুতি আছে, শ্রী শ্রী লোকনাথ বাবার কাছে বারদী ধামে এসে কায়মনোবাক্যে কিছু চাইলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। #