হলি টাইমস ডেস্ক:
আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাৎসরিক পূজা ,মনসা পূজা।হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রতি বছর শ্রাবণ (জুলাই-আগস্ট) মাসে এই উৎসব পালিত হয়। সময় প্রত্যেক হিন্দু বাড়িতে আলাদাভাবে মা মনসার পূজা করতে দেখা যায়।সকাল থেকে পূজা প্রতিমা আনা ,মন্ডপ সাজ,পূজার ফর্দ গোছানো , প্রসাদ তৈরিসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন হিন্দু নর নারীরা।মেয়েরা এই দিন উপবাস করে ব্রত পালন করেন এবং সাপের গর্তে দুধ ঢালেন।এই উৎসবটি হল একটি সর্পকেন্দ্রিক উৎসব।
মনসা হলেন একজন লৌকিক হিন্দু দেবী। তিনি সর্পদেবী। প্রধানত বাংলা অঞ্চল এবং উত্তর ও উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে তাঁর পূজা প্রচলিত আছে। সর্পদংশনের হাত থেকে রক্ষা পেতে, সর্পদংশনের প্রতিকার পেতে, প্রজনন ও ঐশ্বর্যলাভের উদ্দেশ্যে তাঁর পূজা করা হয়। মনসা ঘট স্থাপন করে পুজো করা হয়। মনসা নাগ-রাজ (সর্পরাজ) বাসুকীর ভগিনী এবং ঋষি জরৎকারুর (জগৎকারু) স্ত্রী। তাঁর অপর নামগুলি হল বিষহরি বা বিষহরা (বিষ ধ্বংসকারিণী), নিত্যা (চিরন্তনী) ও পদ্মাবতী।নাগপঞ্চমী তিথিতে মনসার বিধিপূর্বক পূজা প্রচলিত।
মনসাবিজয় কাব্য থেকে জানা যায়, বাসুকীর মা একটি ছোটো মেয়ের মূর্তি নির্মাণ করেছিলেন।শিবের বীর্য এই মূর্তি স্পর্শ করলে মনসার জন্ম হয়। বাসুকী তাঁকে নিজ ভগিনীরূপে গ্রহণ করেন।রাজা পৃথু পৃথিবীকে গাভীর ন্যায় দোহন করলে উদগত বিষের দায়িত্বও বাসুকী মনসাকে দেন। শিব মনসাকে দেখে কামার্ত
হয়ে পড়েন। কিন্তু মনসা প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে তিনি শিবেরই কন্যা। শিব তখন মনসাকে স্বগৃহে আনয়ন করেন। শিবের পত্নী চণ্ডী মনসাকে শিবের উপপত্নী মনে করেন। তিনি মনসাকে অপমান করেন এবং ক্রোধবশত তাঁর একটি চোখ দগ্ধ করেন।পরে শিব একদা বিষের জ্বালায় কাতর হলে মনসা তাঁকে রক্ষা করেন। একবার চণ্ডী তাঁকে পদাঘাত করলে তিনি তাঁর বিষদৃষ্টি হেনে চণ্ডীকে অজ্ঞান করে দেন। শেষে মনসা ও চণ্ডীর কলহে হতাশ হয়ে শিব মনসাকে পরিত্যাগ করেন। দুঃখে শিবের চোখ থেকে যে জল পড়ে সেই জলে জন্ম হয় মনসার সহচরী নেতার।পরে জরৎকারুর সঙ্গে মনসার বিবাহ হয়। কিন্তু চণ্ডী মনসার ফুলশয্যার রাতটিকে ব্যর্থ করে দেন।
তিনি মনসাকে উপদেশ দিয়েছিলেন সাপের অলঙ্কার পরতে আর বাসরঘরে ব্যাঙ ছেড়ে রাখতে যাতে সাপেরা আকর্ষিত হয়ে তাঁর বাসরঘরে উপস্থিত হয়। এর ফলে, ভয় পেয়ে জরৎকারু পালিয়ে যান।পরে তিনি ফিরে আসেন এবং তাঁদের পুত্র আস্তিকের জন্ম হয়।এরপর মনসা তাঁর সহচরী নেতার সঙ্গে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন মানব ভক্ত সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে। প্রথম দিকে লোকেরা তাঁকে ব্যঙ্গ করে।
কিন্তু যারা তাকে পূজা করতে অস্বীকার করে, তাদের চরম দুরবস্থা সৃষ্টি করে তাদের পূজা আদায় করেন মনসা। তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের পূজা লাভে সক্ষম হন। এমনকি মুসলমান শাসক হাসানও তাঁর পূজা করেন। কিন্তু শিব ও চণ্ডীর পরমভক্ত চাঁদ সদাগর তাঁর পূজা করতে অস্বীকার করেন। চাঁদের পূজা আদায়ের জন্য মনসা চাঁদের ছয় পুত্রকে হত্যা করেন এবং তাঁকে নিঃস্ব করে দেন।
পরে তিনি চাঁদের কনিষ্ঠ পুত্র লখিন্দরকে হত্যা করলে, তাঁর বিধবা পুত্রবধূ বেহুলা চাঁদকে মনসা পূজায় রাজি করাতে সক্ষম হন। চাঁদ মনসার দিকে না তাকিয়ে বাম হাতে তাঁকে ফুল ছুঁড়ে দেন। মনসা তাতেই খুশি হয়ে চাঁদের ছয় পুত্রকে জীবিত করেনএবং তাঁর সকল সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন। এরপরই মনসা পূজা ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।অর্বুদ খন্ড ,মনসা মজ্ঞলা ,এবং শিব পুরাণ হতে সংগৃহিত।