Contact For add

Sun, Oct 27 2019 - 2:46:35 AM +06 প্রচ্ছদ >> ভ্রমন

On holiday the joy of the Lauachara National Parkছুটিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আনন্দ

ছুটিতে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আনন্দ

হলি টাইমস রিপোর্ট:
সবুজ বন আর অনন্য প্রকৃতি। মনমুগ্ধতার এক অন্য আবেশ। দু’চোখ জুড়ে সবুজ বন আর নানা প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। গহীন বনে বন্য প্রাণীর হাক আর অবাধ বিচরণ। প্রবেশদ্বার থেকেই স্বাগত জানায় সারিসারি রকমারি গাছ। আর ওই গাছের মগডালে লাফ ঝাঁপ বানর, ভাল্লুক, কাঠবিড়ালী আর কত কি? দূর থেকে কানে বাজে ওদের নিজেদের মধ্যে হট্টগোলের কিচিরমিচির। জীববৈচিত্র্যের সমারোহের এমন নজরকাড়া অপররূপ প্রকৃতির আধার মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান। বর্ষা আর শুষ্ক দু’ মৌসুমে তার ভিন্ন রুপ সৌন্দর্য।
এই বৃষ্টি বন বা রেইন ফরেষ্টটির নাম “লাউয়াছড়া”। যুগ যুগ থেকে আপন রূপ মাধুর্যে দৃষ্টি কাড়ছে প্রকৃতি প্রেমীদের। জাতীয় উদ্যান হিসেবে খ্যাতি অর্জনের পর আপন বৈশিষ্ঠ্যে হয়ে উঠেছে অনন্য। দেশের অন্যতম ও জেলার একমাত্র এই জাতীয় উদ্যানটি দেশি বিদেশী প্রকৃতি প্রেমিদের হ্রদয়ে ঠাঁই পেয়েছে।
উদ্যানের প্রবেশ পথে সারিবদ্ধ গাছ আর আঁকা বাঁকা রেল পথ আকৃষ্ট করে যে কাউকে। কি নেই ওখানে। সবুজ গাছগাছালি, বনজ জঙ্গল  আর লতাগুলুমের মধ্যেই নানা জাতের বন্য প্রাণীর আপন নিবাস। সূর্যোদয় কিংবা গোধূলীলগ্নে ওখানকার বাসিন্ধারা জানান দেয় এটাই তাদের আপন ভুবন। তাদের হাক ডাক আর হৈ হুল্লুড়ে টের মিলে ওখানেই বাসস্থান গড়েছে বন্যপ্রাণীরা। নানা রং আর আকার আকৃতির পোকা-মাকড়ের ঝিঁঝিঁ শব্দ,বিচিত্র সব পশুপাখির কিচিরমিচির,দলবদ্ধ বানরের ভেংচি আর লাফ ঝাঁপ। এক গাছ থেকে অন্য গাছে উল্লুক আর কাঠবিড়ালীর দৌঁড় ঝাঁপ। সাপ,হরিণ,বানর,শিয়াল আর নানা জাতের বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরন। এমন দৃশ্য লাউয়াছড়ায় হরদম।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা। বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সুন্দর বনের পরেই লাউয়াছড়া বনের অবস্থান। জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় এই জাতীয় উদ্যানটির অবস্থান। বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী,ফলজ,বনজ ও ঔষুধি গাছগাছালি আর লতাগুল্ম। নানা জাতের পাখি আর সবুজ প্রকৃতির হাতছানিতে ভরপুর ‘ট্রপিক্যাল রেইন ফরেস্ট’ হিসেবে খ্যাত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এই উপভোগ্য নৈসর্গিক সুন্দর্যের টানে বর্ষা আর শুষ্ক মৌসুমে প্রতিনিয়তই পর্যটকরা ওখানে আসেন।
চায়ের দেশ হিসেবে খ্যাত সিলেট বিভাগের যতগুলো দর্শনীয় স্থান আছে তার মধ্যে লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট অন্যতম। এজেলার ৯২টি চা বাগান,অর্ধশাতাধীক রাবার বাগান,আগর বাগান, মাধকুন্ড জলপ্রপাত,হামহাম জলপ্রপাত, মাধপুর লেক,আলী আমজদের নবাব বাড়ি, কমলা ও লেবুর বাগান, খাসিয়া পুঞ্জির পান চাষ,হাকালুকি হাওর,বাক্কাবিলসহ নানা আর্কষণীয় দর্শণীয় স্থান দেখার পরও পর্যটকরা ছুটে আসেন লাউছড়ায়। উদ্যানটি এখন শুধু পর্যটকদের বিনোদনেরই স্থান নয়। জীবন্ত জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক গবেষণাগারও বটে।
জানা যায় ১৯২৫ খিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে লাগানো নানা জাতের গাছগাছালি বেড়ে আজকে তা ঐতিহ্যবাহী বনে পরিণত হয়েছে। মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২,৭৪০ হেক্টর আয়তনের পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন ছিল এলাকাটি,সেই সুবাদে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পূর্ববতী নাম পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বন। বনের অস্তিত্ব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি ভ্রমণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পশ্চিম ভানুগাছ বনের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও সংশোধন) আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ খিষ্টাব্দে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করা হয়। লাউয়াছড়া আসার পথে রাস্থার দু’ পাশে  চোখে পড়বে চা-বাগান। উঁচু নিচু পাহাড়ী টিলায় চা-বাগান দেখে মনে হবে যেন সবুজ সমুদ্র ঢেউ খেলছে। আর ওখানে এসে ঘন সবুজের গহীনে দেখতে পাবেন বিচিত্র সব পশু-পাখি। বনমোরগ,বানর,খড়গোশ,হনুমান,হরিণ,ভালুক,চিতাবাঘ,সাপসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি। তবে এদের আক্রমণের আশঙ্কা থাকায় ভেতরে যেতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও গাইডের সহযোগিতা লাগবে। জানা যায় এ বনে বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী উল্লুকের বসবাস। মিশ্র চিরহরিৎ এই উদ্যানে রয়েছে-৪৬০ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য। যার মধ্যে রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ। তন্মধ্যে সেগুন,গর্জন, চাপালিশ,মেনজিয়াম,ডুমুর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রয়েছে ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী,৬ প্রজাতির সরীসৃপ,২০ প্রজাতির স্থন্যপায়ী প্রাণী, ১৭ প্রজাতির দুর্লভ পোকা-মাকড় ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এদের মধ্যে মুখপোড়া হনুমান,কুলু বানর,শজারু,উল্লুক,হনুমান,লজ্জাবতী বানর,কালো ধনেশ, সাত ভায়ালা, লাল মাথা ট্রোগন,শ্যামা,অজগর,মেছোবাঘ,মায়া হরিণ,উদবিড়াল ও পাহাড়ি ময়নাসহ বিরল প্রজাতির পাখি নিরাপদ অবয়াশ্রম লাউয়াছড়া। এছাড়াও এ উদ্যানে ৮৫০ হেক্টর জায়গাজুড়ে দীর্ঘমেয়াদি বনায়ন, ১৭০ হেক্টর জায়গায় স্বল্পমেয়াদি বনায়ন,২১ হেক্টরে বাঁশ ও বেত এবং ১৩০ হেক্টর জুড়ে কৃষিজমি,বন গবেষণা এলাকা ও অন্যান্য অবকাঠামো। জানা যায় বিশ্ব খ্যাত ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইট্টি  ডেজ’ ছবির একটি অংশের শুটিং হয়েছিল এই লাউয়াছড়া বনে। ১৩টি দেশের ১১৪টি লোকেশনে চিত্রায়িত হয় ছবিটি। এসব দেশের মধ্যে ছিল ইংল্যান্ড,ফ্রান্স, ভারত,বাংলাদেশ,স্পেন,থাইল্যান্ড ও জাপান। আর বাংলাদেশের অংশের শুটিং হয়েছিল লাউয়াছড়ার জঙ্গলে। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান বিশ্বব্যাপী বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত উল্লুক দেখার জন্য এ ‘রেইন ফরেস্ট’ একটি অন্যতম উদ্যান। পৃথিবীর যে চারটি দেশে উল্লুক দেখা যায় তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এবং বাংলাদেশের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান উল্øুকের একক ও বৃহত্তম আবাসস্থল।
লাউয়াছড়া বনে রয়েছে তিনটি প্রাকৃতিক ‘ফুট ট্রেইল’ বা পায়ে হাঁটা পথ। ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট ইকো-সিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস প্রজেক্ট (ক্রেল)’র শ্রীমঙ্গল ক্লাস্টার অফিসের সাবেক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মাজহারুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমন্বয়ক আ স ম  ছালেহ সুহেল বলেন লাউছড়ার জীববৈচিত্র্য বাংলাদেশের ঐতিহ্য। বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির এই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের সকলের সহযোগিতার প্রয়োজন। আজকে যে পর্যটকরা এখানে ভিড় করছেন তা শুধু ওদেরই জন্য।  #



Comments