Wed, Feb 26 2025 - 11:37:59 AM +06

নির্দেশনা মানেন না দেলোয়ার : নৌ মন্ত্রণালয় কি তার ইচ্ছায় চলে


News Image
হলি টাইমস রিপোর্ট :
ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা সাইদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানের ওপর এবার  নৌ পরিবহন অধিদফতরে  বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ উঠেছে। চাকরিবিধি মানছেন না এই কর্মকর্তা। প্রশ্ন উঠেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় কি দেলোয়ার রহমানের ইচ্ছায় চলে। 
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, নৌ পরিবহন অধিদফতরের ক্যাপ্টেন সাঈদ মোহাম্মদ দেলোয়ার রহমানকে নৌ মন্ত্রণালয় গত ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর পাবনার মেরিটাইম একাডেমিতে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি গত দুই মাসে সেখানে যোগদান করেননি। কর্মস্থলে যোগদান না করে উল্টো নৌ পরিবহন অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। এতে অন্যসব কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ।
নৌ মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, ক্যাপ্টেন দেলোয়ার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে শৃঙ্খলাভঙ্গের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তাকে নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক একাধিকবার চিঠি দিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশনা দেওয়ার পরও তিনি যোগদান না করে অধিদফতরে এসে গোপন বৈঠক করে চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন। দেলোয়ারের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ শৃঙ্খলাভঙ্গে নৌ মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা ইন্দন দিচ্ছেন বলেও ওই সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 
সামরিক গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক’কে জানিয়েছেন, ক্যাপ্টেন দেলোয়ার মাঝে মধ্যেই নৌ পারিবহন অধিদফতরে এসে গোপন মিটিং করেন। তার সঙ্গে অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই গ্রুপটি দেলোয়ার রহমানকে ফের নৌ পরিবহন অধিদফতরে তার আগের পদে ফিরিয়ে আনতে অপচেষ্টায় লিপ্ত।  তিনি এ বিষয়টি নজরে রেখেছেন। 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাপরিচালক কোনো অফিসিয়াল কাজে নৌ মন্ত্রণালয় বা ভিজিটে  থাকলেই এই গ্রুপটি নটিক্যাল সার্ভেয়ার ও পরীক্ষক ক্যাপ্টেন কাজী মুহাম্মদ আহসানের  রুমে রুদ্ধদার   বৈঠকে বসেন। এরকম একাধিক বৈঠকের তথ্য পেয়েছেন এ প্রতিবেদক। সেই বৈঠকে দেলোয়ার রহমানের পর  শৃঙ্খলা ভঙ্গে বড় ভূমিকা পালন করছেন ক্যাপ্টেন এহসান। 
ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ভিন্ন একটি সূত্র জানিয়েছেন, এই গ্রুপটির লক্ষ্য হচ্ছে, অতীতে যেভাবে সাবেক মহাপরিচালক কমডোর নেজামুল হক’কে রাতারাতি বদল করানো হয়েছিল ঠিক সেই ভাবেই বর্তমান মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমকে বদল করে পুনরায় জিএমডিএসএস প্রকল্প পরিচালক পদে ফিরে আসতে চায় দেলোয়ার রহমান। 
 
নির্ভযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছেন, চীফ ইঞ্জিনিয়ার ও শীপ সার্ভেয়ার নাজমুল হক জিএমডিএসএস প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন  ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের হাতে  গ্রেফতার হওয়ার পর জিএমডিএসএস প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয় চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার জসিম উদ্দিনক’কে। তিনি অবসরে যাওয়ার পর এক্সামিনার ক্যাপ্টেন দেলোয়ার রহমান পান সেই দায়িত্ব। 
দায়িত্ব পাওয়ার কয়েকমাসের মধ্যেই ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে দেলোয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। ৭৭৯ কোটি টাকার ইজিআইএমএনএস প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ার আগেই কমপক্ষে ৮০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের অন্যতম দোষর সেই সময়ের নৌ সচিব  মোস্তফা কামাল চরম প্রভাবশালী করে তোলেন দেলোয়ারকে। ধারনা করা হয়, এই প্রকল্পের দুর্নীতির সিংহভাগ টাকা গেছে সাবেক সচিব কামালের পকেটে।  
সেই সময় নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর নেজামুল হক জিএমডিএসএস পরবর্তীতে বদল হওয়া ইজিআইএমএনএস প্রকল্পে দুর্নীতি অনুসন্ধানে একটি আন্ত:দফতর তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। সেই তদন্ত কমিটি প্রায় ১২০ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য পেয়েছিলো। কিন্তু সাবেক নৌ সচিব মোস্তফা কামাল সেই তদন্ত কমিটির কার্যকারিতা স্থগিত করে দেন। দুর্নীতিতে তার নাম যাতে না জড়ায় এজন্য কমডোর নেজামূলক হক’কে দিনের মধ্যেই বদল করেন নৌ সচিব এবং তখনকার নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
জিএমডিএসএস প্রকল্পটি কাগজে কলমে শেষ হলেও দুর্নীতির রেশ এখনো রয়েছে। দুদকে এ বিষয়টি নিয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। যার তদন্ত শুরু হলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ফেঁসে যেতে পারেন।
সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করছেন, দেলোয়ার রহমান পাবনা মেরিন একাডেমিতে যোগ দিলে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগের ফের তদন্ত শুরু হতে পারে। যে কারনে নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে তিনি ফের অধিদফতরে  থাকার চেষ্টা করছেন। 
নৌ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, সাবেক সচিব মোস্তফা কামালের মতো তার এই বিধি লঙ্ঘনের বিশৃঙ্খলায় সহায়তা করছেন নৌ মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) দেলোয়ারা বেগম। বিষয়টি জানতে একাধিকবার  দেলোয়ারা বেগমের মুঠোফোনে কল দেওয়া হয়েছিল। তিনি রিসিভ করেননি।
তবে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা দেলোয়ারকে সাপোর্ট না করলে তার পক্ষে চাকরি বিধি লঙ্ঘনের সাহস হতো না। এতে মূলত চাকরীক্ষেত্রে চেইন অব কমান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্নীতিবাজরা আরো দুর্নীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। 
নৌ পরিবহন অধিদফতর ভবন : ছবি : হলি টাইমস
নৌ পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম (ই) বিএসপি এনইউপি বিসিজিম বিসিজিএমএস এনডিসি পিএসসি বিএন, বলেছেন, দুই মাসের বেশি সময় হলেও দেলোয়ার রহমান নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করায় মূলত চাকরিবিধ লঙ্ঘন হয়েছে।  চেইন অব কমান্ড নষ্ট  হয়েছে। বিধি মোতাবেক কর্মস্থলে যোগদান না করায় শৃঙ্খলা নষ্ট হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয়কে একাধিক চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করানো হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয় বিষয়টিকে  কোনো গুরুত্ব না দেওয়ায় তিনি হতাশ। 
মহাপরিচালক বলেছেন, যখন কোনো কর্মকর্তা মন্ত্রনালয়ের নিদের্শ অমান্য করে কর্মক্ষেত্রে  যোগদান না করে মাসের পর মাস ঘুরে বেড়ায় তখন অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে এর প্রভাব পড়ে। অধ:স্থন কর্মকর্তারা আর উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ মানতে চায় না। এর একটা খারাপ প্রভাব পরে পুরো সিস্টেমে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় পুনর্বাসন করে তাহলে তারতো আর করার কিছু থাকে না। 
দেলোয়ার রহমান কেনো এখনো কর্মস্থলে  যোগদান করেননি, এতে পাবনা মেরিটাইম একাডেমির দৈনিক কার্যক্রমে কোনো  নেতিবাচক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে কিনা সেই বিষয়টি জানতে পাওয়া হয়েছিল সেখানকার কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন  তৌফিকুল ইসলামের কাছে। তিনি বিষয়টি সরাসরি এড়িয়ে গিয়ে বলেন এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলবেন না।