Sat, Nov 30 2024 - 8:32:30 PM +06

স্থানীয় সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ‍শিশুদের মাঠ দখলে ক্লাব


News Image

ঢাকা শহরের শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠগুলো স্থানীয় সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ‍বিভিন্ন ক্লাবের নাম দখল করে নিচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি। মাঠ ও পার্ক দখলে স্থানীয় সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষ কখনো সক্রিয়, কখনো নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালনের মাধ্যমে এই মাঠ দখলে সহযোগিতা করছে। ক্লাবের নামে মাঠ দখলে কিছু ব্যক্তি রাজনৈতিকদলসহ নানা পেশার মানুষকে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্রের জনগনের টাকায় এই মাঠ ও পার্কগুলো নির্মাণ করা হলেও, ব্যবস্থাপনার নামে বিভিন্ন ক্লাব এগুলো দখল করে প্রশিক্ষন, মেলাসহ নানা বাণিজ্যিক কার্যক্রম করছে। বাণিজ্যিক লাভের জন্য মাঠে নানা স্থাপনা নির্মাণ করছে, ভাড়া দিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকায় এই ক্লাবগুলোর সদস্যপদ বিক্রি করছে এ ধরণের স্বার্থানেষী শ্রেণীর জন্ম দিচ্ছে। কমিউনিটির মাঠ বাণিজ্যিক ক্লাবের মাঠে পরিণত করছে। এতে স্থানীয় নাগরিক বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের খেলার অধিকার হরণ হচ্ছে।  বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগ শিশুদের খেলার মাঠ দখলে ক্ষমতাবান অপশক্তি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের নীরবতা শীর্ষক সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।

 

বক্তারা বলেন, মাঠ, পার্ক বিলাসিতা নয় হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, ক্যান্সারসহ অসংক্রামক রোগ কমানোর পাশাপাশি যুবকদের মাঝে মাদক, হতাশা ইত্যাদি কমাতে মাঠ, পার্ক গুরু্ত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে । মাঠ, পার্ক নাগরিকদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। আমাদের নগর পরিকল্পনায় মাঠ, পার্ক এখনো গুরুত্ব পায়নি। নগর কর্তৃপক্ষ মাঠ, পার্কগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা না করায় মাঠ পার্কগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দখল চলে যাচ্ছে। খেলামাঠ না থাকলে মাদক সমাজে আসবেই।

 

বক্তারা বলেন, কমিউনিটি মাঠ স্টেডিয়ান নয় এই বিষয়টি সকলের বোঝা দরকার। কমিউনিটি মাঠ শুধু কমিউনিটির ভিত্তিক খেলাধূলার জন্য। এ মাঠ উম্মুক্ত থাকবে যাতে শিশু-কিশোর অবাধে  এবং মুক্তভাবে খেলতে পারে। কিন্তু কমিউনিটির মাঠগুলো স্টেডিয়াম বা প্রশিক্ষন কেন্দ্র বানিয়ে দখল করে নিচ্ছে বিভিন্ন ক্লাব বা বেসরকারি প্রতিস্থানগুলো। মাঠের পাশে প্রথমে একটি ক্লাব হাউস তৈরি করা হচ্ছে। ক্লাবের উদ্যোগে মাঠে প্রথমে প্র্রাথমিক প্রশিক্ষন শুরু করা হয়, নিয়োজিত থাকে তাদের নিজস্ব সিকিউরিটি। তারপর ধীরে ধীরে নানা স্থাপনা তৈরি করে যার মধ্যে রয়েছে  ভবনসহ ব্যাডমিন্টন  কোর্ট, টেনিস কোর্ট, একাধিক ক্রিকেট প্র্যাকটিস ম্যাচ। এগুলোর মাধ্যমে মাঠ ক্লাবগুলোর দখলে চলে যায়। ক্লাবগুলো প্রশিক্ষনের জন্য মাঠ অধিকাংশ সময় ব্যস্ত রাখে। আর স্থানীয় কিশোর তরুণরা মাঠে খেলতে পারে না।

 

মাঠ, পার্ক দখলের দখলের প্রত্যক্ষ উদাহরণ দিতে গিয়ে বক্তারা বলেন: ধানমন্ডি মাঠ এক সময় উম্মুক্ত ছিল। কিন্তু এক সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ক্লাবের নামে মাঠটি দখল করে নেয়। মাঠটি সবার জন্য উম্মুক্ত রাখার কথা বলা হলেও, এক সময় পুরো মাঠে ক্লাবটি নানা স্থাপনা তৈরি করে। ফলশ্রুতিতে শুধুমাত্র ক্লাবের সদস্যদের প্রশিক্ষনের জন্য মাঠটি সংরক্ষিত হয়ে যায়। কিছুদিন আগে গণপুর্ত  নিজস্ব সাইনবোর্ড স্থাপন করলেও তা গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়। গুলশানে শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক ও মাঠ উদাহরণ টেনে বক্তারা বলেন, এ মাঠ ও  পার্কটি কিছু লোকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রুপান্তর করছে। বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য রাখা উম্মুক্ত স্থানটি তারা ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে, ফুটবলের টার্ফ বানাচ্ছে। এই পার্ক ও মাঠ নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে ০৩ টি মামলা দায়ের এবং নিস্পত্তি হয় যার ০৩ টিতেই মহামান্য আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ রাজউককে দখল উচ্ছেদের এবং সিটি করপোরেশনকে কোন ভাবে লীজ বা দখল দেওয়া বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মাঠ ইজারা দিয়েছে আর রাজউক এ সকল বিষয় জেনেও নিরবতা পালন করছে।

 

সভায় মাঠ ও পার্কে নাগরিক অধিকার রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলন করার অঙ্গীকার করা হয়। এই সাথে মহানগরীর মাঠ, পার্ক, জলাধার সংরক্ষন আইন সংশোধন, মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা। দেশের সকল মাঠ ও পার্কের তালিকা প্রণয়ন ও উম্মুক্তকরণ, মাঠ, পার্ক সংরক্ষন ও ব্যবস্থাপনার জন্য অর্থায়ন এবং মাঠ, পার্ক দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয়।