হলিটাইম ডেস্ক: সিগারেট কোম্পানিগুলো বেপরোয়াভাবে ক্ষতিকর এই দ্রব্যের প্রচার-প্রচারণায় নেমেছে। জনকল্যাণ নয় বরং কিশোর ও তরুনদের সিগারেটে ও ই-সিগারেটে আসক্ত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং মুনাফা অর্জনই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সিগারেট কোম্পানিগুলোকে বারবার সর্তক করার পরও তারা আইনের তোয়াক্কা না করে ক্রমাগত আইন লঙ্ঘন করে চলেছে। আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইন লঙ্ঘনকারী বেপরোয়া সিগারেট কোম্পানিগুলোকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
উক্ত বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে আজ ২৩ অক্টোবর (বুধবার) ২০২৪, সকাল ১১.০০ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সম্মুখে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত “তরুণদের আসক্ত করতে সিগারেটের বেপোরোয়া প্রচারণা , কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হোক” শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী এবং প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন ডাস এর কর্মসূচি সমন্বয়কারী মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু। কর্মসূচিতে বক্তব্য প্রদান করেন এইড ফাউন্ডেশন এর প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, বাটা’র সচিবালয়ের দপ্তর সম্পাদক এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (টিসিআরসি) এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা,এইড ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনীক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর প্রজেক্ট অফিসার ইব্রাহীম খলিল, মানস এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা আবু রায়হান, প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য, টিসিআরসি এর প্রকল্প কর্মকর্তা বিভূতি ভূষণ মাহাতো।
কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব, বাটা’র নেটওয়ার্ক কর্মকর্তা আজিম খান, ডাস এর প্রোগ্রাম অফিসার মো. রবিউল আলম, এইড ফাউন্ডেশন এর হিসাব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, আর্ক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড কো-অর্ডিনেটর জায়েদ আহমেদ, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির প্রোগ্রাম অফিসার আকাশ চক্রবর্তী, নাটাব’র প্রকল্প কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা রুশি, শিশুদের জন্য মুক্ত বায়ূ সেবন সংস্থার প্রচার সম্পাদক মো. সেলিম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের আব্দুল্লাহ আল-সামির, আবদুল আজিজ খালেদ, সামিউল হক ফাহিম।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে, তামাকজাত দ্রব্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা নিষিদ্ধ। কিন্তু ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থানে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে আসছে। মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদেরকে ই-সিগারেটে আসক্ত করছে। উল্লেখ্য ই-সিগারেট নেশা সৃষ্টি করে এবং ক্ষতিকর বিধায় ভারতসহ ইতোমধ্যে বিশ্বের ৪৭টি দেশ ই-সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। আগামী প্রজন্মের সুরক্ষায় দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ এবং আইন লঙ্ঘনকারী বেপরোয়া সিগারেট কোম্পানিগুলোকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
বক্তারা আরো বলেন, প্রতিবছর তামাকজনিত কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এই বিশাল চিকিৎসা ব্যয়ের দায়ভার তামাক কোম্পানি কোনোভাবেই এড়াতে পারেনা। আজকের তরুণরাই আগামীতে দেশ পরিচালনা করবে। গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ তরুণ মাদকাসক্ত এবং এদের সবাই ধূমপায়ী। তারা নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধির জন্য সিগারেটের পাশাপাশি বিভিন্ন সুগন্ধিযুক্ত ও আকর্ষণীয় মোড়কে নতুন নেশা দ্রব্য ই-সিগারেট/ভেপিংয়ের বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে তরুণদের আসক্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, রাজধানী ছাড়িয়ে এখন মফস্বল এলাকার তরুণদের হাতেও পৌঁছে গেছে এই মরণ নেশা।সিগারেট কোম্পানিগুলোর সরাসরি মদদ ও অর্থায়নে ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলো পরিনত হয়েছে ধূমপানের আখড়ায়। কোম্পানিগুলোর এ ধরনের কার্যক্রম সরকারের জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সাথে সাংঘর্ষিক। তামাক কোম্পানি কোনোভাবেই রাষ্ট্রীয় আইনের ঊর্ধ্বে হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ক্ষতিকর তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের নূন্যতম শেয়ার প্রত্যাহার এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি। তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় নাটক, সিনেমায় জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের ধূমপান প্রদর্শন বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। বর্তমানে জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণদের ধূমপানে উৎসাহিত করতে ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে ।
অবস্থান কর্মসূচিটি থেকে নিন্মোক্ত এর সুপারিশ করা হয়:
১. আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
২.আইন অমান্যকারী দোকানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা
৩ নিয়মিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি জেল প্রদান
৪. দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা
৫.তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে নীতি সুরক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ
৬. জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ দ্রুত চূড়ান্ত এবং দেশব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ
৭. টাস্কফোর্স কমিটিসমূহ সক্রিয় এবং সভা নিয়মিতকরণ
৮. তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন মনিটরিং কার্যক্রমের সাথে বেসরকারী সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা