Fri, Oct 4 2024 - 9:59:02 PM +06

সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার ৮ দফা দাবিতে শহীদ মিনারে বিশাল সমাবেশ


News Image

 

হলি টাইমস রিপোর্ট :

খুন, ধর্ষন, অপরহণ, জ্বালাও পোড়াও , নিযাতন এবং মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের প্রতিবাদে জেগে উঠেছে দেশের সংখ্যালঘু সনাতন হিন্দুরা। সনাতন হিন্দুরা তাদের নাগরিক নিরাপত্তা এবং সামিজক সুরক্ষার জন্য ৮ দফা দাবিতে  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশাল গণসমাবেশ করেছে। তারা বলেছে, দাবিগুলো পুরন না হওয়া পযর্ন্ত রাজপথ ছাড়বে না।

শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের ব্যানারে এই বিশাল গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের সকল সনাতনী সংগঠন, মঠ-মন্দিরের সাধু, শন্তু, মহারাজ, ছাত্র-শিক্ষক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, হরিজন, ঋষি, রাজবংশীসহ সনাতন হিন্দুদের সকল স্তরের প্রতিনিধিরা  এই সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। 

অধ্যাপক ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে গনসমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নির্মল বিশ্বাস, প্রসেনজিৎ কুমার হালদার, রাজেশ নাহা এবং পিযুষ দাস।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম আর্ন্তজাতিক ভাবনামৃত সংঘ, ইস্কন-এর সাধারণ সম্পাদক লীলারাজ ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম পুন্ড্ররিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, শ্রীমৎ রবীশ্বানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ স্বরুপ দাস বাবাজী মহারাজ, শ্রীমৎ গোপীনাথ দাস ব্রহ্মচারী, প্রফেসর চন্দন সরকার, সুমন গোস্বামী পুলক। বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি দিপঙ্কর সিকদার দীপু, মুখপাত্র সাজন কুমার মিশ্র, বাংলাদেশ সনাতন পার্টির সভাপতি আশীষ চন্দ্র দাশ, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুমন কুমার রায়, বিশ্ব হিন্দু ফেডারেশনের মহাসচিব সাংবাদিক শ্যামল কান্তি নাগ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব পলাশ কান্তি দে, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত অধিকারী, সারদাঞ্জলী ফোরামের মহানগর সভাপতি রতন চন্দ্র পাল ও কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন পাল।  বাংলাদেশ সচেতন সনাতনী নাগরিক এর এডভোকেট সুশান্ত অধিকারী, বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রসেঞ্জিত কুমার হালদার, নির্মল বিশ্বাস, প্রদীপ কান্তি দে, সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি সাজেন কৃষ্ণ বল, রনি রাজবংশী, দেবব্রত সরকার, জাগো হিন্দু পরিষদের চট্টগ্রামের টিটু শীল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ হিন্দু পরিষদের বিকাশ চন্দ্র দাস, নারায়ন গঞ্জ জেলা সভাপতি প্রকৌশলী উত্তম কুমার দাস, হিন্দু যুব পরিষদের সাতক্ষীরা জেলার সভাপতি মনোদীপ মন্ডল।

মহাসমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করেন জাগো হিন্দু পরিষদ, হরিজন ঐক্য পরিষদ বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান পরিষদ, ভক্ত সংঘ সোসাইটি, ভক্ত সংঘ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ফোরাম, সুহৃদ বাংলাদেশ প্রমুখ সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। 

সনাতন হিন্দুদের ৮ দফার মধ্যে রয়ছে,  ১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য "নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন" গঠনের মাধ্যমে "দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল" গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা ২.অনতিবিলম্বে "সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন" প্রণয়ন করা। ৩.সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন ।  ৪.  হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট কে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা।  ৫. "দেবত্তোর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন" প্রণয়ন এবং "অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ" আইন যথাযথ প্রয়োগ ৬. সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলের প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা ।  ৭. সংস্কৃত পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করা  ৮. শারদীয় দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি প্রদান।

বক্তারা বলেছেন, এসব দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর যে ক্রমাগত আক্রমন হচ্ছে এবং ঘড়বাড়ি মন্দির পোড়ানো হচ্ছে, দেব-দেবীর মূর্তি ভাঙা হচ্ছে , খুন অপহরন হচ্ছে, তার দ্রুত বিচারের দাবি করেছেন বক্তারা। এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হিন্দুদের বাংলাদেশে ছেড়ে চলে যাওয়ার যে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে তারও তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। সনাতন হিন্দুরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছে, তারা বাংলাদেশের ভূমিপুত্র। তারা দেশ ছেড়ে যাবে না। তাদের যেন কোনো দেশের দালাল জাতীয় ট্যাগ লাগানো না হয় সেই হুশিয়ারিও উচ্চারন করা হয়েছে ওই সমাবেশ থেকে। দেশটির হিন্দুরা  কোনো একটি রাজনৈতিক দলের বিশেষ সমর্থক এই শব্দটিও আগামীতে মুছে ফেলবেন বলে শপথ নিয়েছেন।সনাতন  নেতৃবৃন্দ বলেছেন, স্বাধীনতার পর বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই হিন্দুদের অধিকারগুলো পূরণ করেনি। এজন্য তারা আর রাজনৈতিক লেবাস লাগবেন না। কোনো রাজনৈতিক দলকে হিন্দুদের শোষনের তাবেদার বানাবেন না। যারা হিন্দুদের স্বার্থ রক্ষা করবেন, হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবেন, নাগরিক অধিকারের সুরক্ষা করবেন তাদের সমর্থন দেবেন বলে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে  দেওয়া হয়েছে ওই সমাবেশ থেকে। দুর্গা পূজার আগেই অন্তবর্তী সরকার দাবি পূরণ না করলে আগামী ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘী ময়দানে বিশাল বিভাগীয় সমাবেশ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলত সংখ্যালঘু জোট ।