Sat, Sep 21 2024 - 10:09:23 PM +06

জাতীয় চিড়িয়াখানার দুটি হাতির পাগলের মতো আচারণ


News Image
আবুল কাশেম :
জাতীয় চিড়িয়াখানার দুটি হাতি প্রায় পাগল হয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গত রোজার ঈদের সময় মানুষ হত্যা করেছিল যে রাজাবাহাদুর নামের হাতি সেটিও এর মধ্যে রয়েছে । যা দর্শনার্থীদের জন্য ভয়াবহ একটি বার্তা বলে মনে করছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। 
চিড়িয়াখানার প্রধান মাহুতের ছেলেকে পায়ে পিষে মেরে ফেলার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে  সেই বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে হাতিদের পাগল হয়ে যাওয়ার তথ্য পায় হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক। 
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছেন, বহিরাগত দুটি হাতি এবং চিড়িয়াখানায় তিনটি নিজস্ব  হাতি মিলে মোট পাঁচটি হাতি নিয়ে জাতীয় চিড়িয়াখানার হাতিশাল তৈরি করা হয়েছে। এতো বড় হাতিশাল করা হলেও মূলত: হাতি লালন পালন করার প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। রয়েছে হাতির খাদ্য সংকট।
গত রোজার ঈদের দিন ১৮ বছর বয়সী জাহিদ নামের যে ছেলেটিকে রাজাবাহাদুর নামের হাতিটি নির্মমভাবে পায়ে পিষে মেরে ফেলেছিল সেটি ছিল বহিরাগত । ২০১৮ সালে ওই হাতিটিকে রাজধানী ঢাকার রাস্তায় চাঁদাবাজি করার সময় র‌্যাব আটক করে আইনি প্রক্রিয়ায় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের হেফাজতে রেখে দিয়েছিল। এখন সেটাই গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। 
ঈদে মানুষ হত্যার পর মূলত: হাতিগুলোকে আর জনসম্মুখে আনা হচ্ছে না। সব হাতিগুলোকে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে রাখা হয়েছে। সামনে এবং পেছনে দুই পায়েই শিকল পড়িয়ে রাখা হচ্ছে  প্রশ্রাব পায়খানায় কর্দমাক্ত সেডে। প্রশ্রাবের জল জমে গেছে হাতির পায়ের নিচে । কিলবিল করছে নানা  পোকামাকড়। পূঁতি দুর্গন্ধ । হাতিগুলো দিনের পর দিন ঘুমাতে পারছেনা সেই পঁচা জলের মধ্যে। চরম বিরুপ পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ওই হাতিগুলোর মানসিক বৈকাল্য দেখা দিয়েছে এবং চরম রাগান্বিত অবস্থার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন একজন মাহুত। তিনি বলেছেন, একটি হাতি পাগল হওয়ার সময় যে রকম আচরন করে এবং তাদের যে শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়  সেই লক্ষন দুটি হাতির মধ্যে  দেখা গিয়েছে। বাকি হাতিগুলোও স্বাভাবিক আচারন করছে না। 
চিড়িয়াখানার প্রধান মাহুত আজাদ হলি টাইমসকে জানিয়েছেন, তার একমাত্র ছেলেকেই গত  রোজার ঈদের দিন চিড়িয়াখানার নিজস্ব হাতি নয় এমন বহিরাগত হাতি রাজাবাহাদুর পায়ে পিষে মেরেছে। মাত্র তিন মিনিটের জন্য তিনি বাথরুমে যাওয়ার মধ্যেই এই মর্মান্তিক মৃত্যুর দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, আমি মাস্টার রোলে দিনমজুর হিসেবে হাতি লালন পালন করি। চিড়িয়াখানায় পাঁচটি হাতির জন্য কমপক্ষে ১০ জন মাহুত দরকার। অথচ আছে মাত্র ৫ জন। এর মধ্যে সরকারি রাজস্ব খাতে নিয়োগ বা স্থায়ী মাহুত হিসেবে চাকরি পেয়েছেন ২জন। বাকি ৩ জন দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করেন। 
 
স্থায়ি মাহুত হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ফরিদ হাতি লালন পালনের কিছুই জানে না। সে গন্ডার পালন করেন। আর একজন স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া মাহুত হাতি পালনের ধারে কাছেও যায় না। মূলত: দিনমজুর তিন মাহুতই হাতি পালনের কাজটি করেন। 
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলেকে বহিরাগত হাতি মেরে ফেলার পর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আমার চাকরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছিল। ক্ষতিপূরন দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রতি রাখেনি। 
চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার
 
চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার  অবশ্য প্রধান মাহুত আজাদের ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় মর্মাহত। তিনি বলেছেন, ওই সময় তার অবস্থান থেকে যা বলা বা করা দরকার তা-ই করেছেন। তিনি জানান, মাস্টার রোলে দিন মুজরি ভিত্তিক যারা চাকরী করেন তাদের ক্ষতিপূরন দেওয়ার বিধান নেই। তারপরও তিনি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অর্থ তুলে আজাদের পরিবারকে দিয়েছেন। আজাদের চাকরী স্থায়ী করার বিষয়েও তিনি বিধি মেনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে  জানিয়েছেন। 
ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, হাতি পালন একটি সেনসিটিভ বিষয়। এখানে দক্ষ মাহুত দরকার। পরিবেশ দরকার। অথচ  যে হেড মাহুত, যে সব হাতিগুলোকে পরিচালনা করতে পারে, হাতির ভাষা বোঝে, সব হাতিগুলো তার কথা শোনে,  সেই হেড মাহুত আজাদ এখানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কাজ করে। অথচ যাদের হাতি পালনের জন্য সরকারি  কোঠায় স্থায়ি চাকরি দেওয়া হয়েছে তাদের দুজনই হাতি পালনের কিছুই জানে না। এদের একজন গন্ডার পালে আরেক জন হাতিশালে থাকলেও হাতি দেখাশুনা করতে পারে না। এভাবে কি চিড়িয়াখানার সব থেকে বড় আকর্ষন হাতিশাল পরিচালনা করা যায় এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন তিনি। 
হাতিশাল নিয়ে চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন মি. রফিকুল ইসলাম । তিনি স্পষ্ট বলেছেন, হাতি লালন পালনে যে পরিকাঠামো আর লোকবল দরকার তা তার চিড়িয়াখানায় নেই। চিড়িয়াখানার তিনটি নিজস্ব হাতি পালনের লোকবল এবং খাবার আমার নেই । সেখানে পাঁচটি হাতি আমাকে পালতে হচ্ছে। বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বহিরাগত হাতিগুলো। বিষয়গুলো অধিদফতরকে জানিয়েছেন। একটি কর্ম পরিকল্পনাও তৈরি করেছেন তিনি। 
তিনি আরো জানান, আজাদের ছেলের মুত্যৃর পর হাতিগুলোর মানসিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ড কাজ করেছে। তারা বলেছিল, হাতিগুলো পাগল হয়নি। কিন্তু এখন যে পরিবেশে রয়েছে তাতে পাগল হতে বেশি সময় লাগবে না। যদিও তিনি অপ্রান চেষ্টা করছেন পরিবেশ ফেরাতে।
 
এদিকে  হেড বা প্রধান মাহুত আজাদ হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক’কে বলেছেন, দুটি হাতি অলরেডি পাগল হয়ে গেছে। তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় তিনি মাহুত হয়েছেন। তিনি জানেন পাগলা হাতির আচরন এবং তাদের শারীরিক পরিবর্তন।  হাতির চোখের কোনের উপর পাশে যে ছিদ্র রয়েছে সেখান দিয়ে ময়লার মতো বর্জ্য বের হলে বুঝতে হবে হাতি চরম মানসিক যন্ত্রনায় রয়েছে। অস্বাভাবিক ভাবে মাথা দোলাবে, চোখের রং আর দৃষ্টি বদলাবে। দুটি হাতির এমন আচারন তিনি পর্যবেক্ষন করেছেন। এখন কোনো মাহুত হাতির শরীর স্পর্শ করতে ভয় পাচ্ছে। দীর্ঘ দিন হাতির দুই পা বেধে রাখায় তারা ক্রমশ নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে। এদের এখন স্বাভাবিক করা খুবই কষ্টসাধ্য হবে। যদিও পরিচালক বলেছেন, খুব তাড়াতাড়ি হাতিগুলোকে প্রাকৃতিক পরিবেশে  রেখে সুস্থ করা হবে।