Wed, Jun 26 2024 - 7:46:16 PM +06

গাজীপুরের পূবাইলে দিনের বেলায় খুনের চেস্টা : লাম্পট্যের কথা নিজের মুখেই স্বীকার অপরাধীর


News Image
হলি টাইমস রিপোর্ট :
দিনের বেলাতেই খুনের চেষ্টা এবং ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের পূবাইলের বিজয় চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রাতারাতি বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যাওয়া এই বিজয় একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলেও অভিযোগ উঠেছে। 
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বিজয় দাস গং দীর্ঘবছর ধরে সম্পা রানী দাসের পরিবারের ক্রয় করা কমপক্ষে ৪ কাঠা জমি জবরদখল করে রেখেছে। প্রতিবেশি দুই পরিবারের মধ্যে এই নিয়ে চরম বিরোধ । জমি হস্তান্তর বিলম্বিত করতে বিজয় দাস গংয়েরা আদালতে একটি মামলাও করেছে, যা চলমান। 
বিজয় দাসের পরকীয় সম্পর্কিত কলহের মধ্যেই গত ৩০ মে বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটে বিজয় দাস দেশীয় বড় রাম দা নিয়ে সম্পা দাসের ঘরে ঢুকে খুন করার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। ওই সময় সম্পা দাস ও তার ছেলে বাড়িতে ছিল। ভয়ে আর্তচিৎকার করার পর টাকা পয়সা ও সোনাদানা নিয়ে দ্রুত কেটে পড়ে বিজয় দাস এমন অভিযোগ তাদের। এ বিষয়ে পূবাইল থানায় একটি জিডি এবং আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে।
 

 

 

এদিকে ভিন্ন একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেশি সুচিত্রা দাসের সঙ্গে বিজয় দাসের পরকীয়া প্রেমের গুঞ্জন শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতে বিজয় দাস , সুচিত্রা দাস এবং সম্পা দাসের মধ্যে চরম কলহ শুরু হয়। সম্পা দাস মিথ্যা এই গুঞ্জন ছড়াচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার দিন সুচিত্রা দাস বিজয় দাস’কে ফোন করে উত্তেজিত করে। ওই সময় বিজয় দাস পূবাইল রেলস্টেশন বাজারে নিজের  দোকানে ছিল। ওখান থেকেই চরম আক্রোশে বাড়িতে এসে বড় রাম দা নিয়ে খুন করতে যায় প্রতিবেশি সম্পা দাস কে। কিন্তু সম্পা দাস ও তার ছেলে একটি রুমে ছিটকানি লক করে আত্মরক্ষা করলে বিজয় দাস শুধু লুটপাট করেই ফিরে আসে। বিজয় দাস যে রাম দা দিয়ে খুনের চেষ্টা করেছিল তা ফৌজদারি আইনে অবৈধ অস্ত্র এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য । 
অন্যদিকে বিজয় দাস নিজেই জোর গলায় বলেছেন, সে সম্পা দাস’কে ধর্ষন করেছেন। তবে এর জন্য তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। যা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে গাজীপুরের পূবাইল এলাকায়। এলাকার অনেকেই বিজয় দাসকে ভালো চরিত্রের মানুষ হিসেবে দাবি করলেও নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে বিজয় দাস প্রমান করলেন তিনি একজন চরিত্রহীন লম্পট। বিজয় দাসের স্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন যে তার স্বামী ওই খারাপ কাজ করেছেন। এধরনের একটি ভিডিও ক্লিপ হলি টাইমসের হাতে রয়েছে। 
তবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও  ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সম্পা দাস। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন এর সত্যতার প্রমান দিতে হবে  নয়তো আদালতে ফের আরো একটি নারী নির্যাতন মামলা করতে বাধ্য হবেন তিনি।
 

এদিকে সূচিত্রা দাসের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের বিষয়ে কথা বলেছেন হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিবেশি হিসেবে সব সময় কথা হয় বিজয় দাসের সঙ্গে। এছাড়াও প্রতিদিন সকাল বেলা বিজয় দাস তার দোকানে বসে চা সিগারেট খেয়ে কিছুটা সময় কাটিয়ে তারপর নিজের দোকানে যান। হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক দেখেছেন,  যেখানে বিজয় এবং সুচিত্রা দাসের বাড়ি সেই সাতানী পাড়া বা লোকমুখে কথিত মালি পাড়া গ্রামের রাস্তাটা যেখানে প্রধান সড়কে মিশেছে সেখানেই সুচিত্রার স্বামী অবিনাস দাসের মনোহরি দোকান। যা সুচিত্রা দাস এবং তার ছেলে বিকাশ দাস পরিচালনা করে। সেখান থেকে ৪শ’ মিটার পশ্চিম দিকে বিজয় দাসের অটো, সাইকেল, ভ্যানের টায়ার টিউবের দোকান। অর্থাৎ পূবাইল রেলস্টেশন বাজারের পশ্চিম এবং পূর্ব প্রান্তে সুচিত্রা এবং বিজয়ের দোকান। প্রতিদিন রুটিন করেই সুচিত্রার দোকানে নিরিবিলি সকালে চা সিগারেট কেনো পান করেন বিজয় দাস, কেনো তিনি দ্ইু মিনিটের পথ পেরিয়ে অন্য কোনো দোকানে চা সিগারেট পান করেন না  সেই প্রশ্নটি সামনে এসেছে। এই প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেননি ওই দুই জন। ওই দুই জনের  মোবাইল ফোন কল লিস্ট চেক করার জন্য ঢাকার গোয়েন্দা বিভাগের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দৈনিক হলি টাইমসের আগামী রিপোর্টে বিষয়টি প্রকাশ করা হবে। 
তবে সুচিত্রার স্বামী অবিনাশ দাস যুক্তি দিয়ে বলেছেন, ফোনে কথা বললে কিংবা দোকানে সকাল বেলা চা সিগারেট  খেতে  কিছুক্ষণ সময় কাটালে বা কথা বললে পরকীয়া প্রেম হয়ে যায় না। তার স্ত্রী বিজয়ের সঙ্গে পরকীয়ায় মত্ত নয়। এটা সম্পা দাসের বানানো প্রপাগান্ডা। 
বিজয় দাসের পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে যে, সুচিত্রার সঙ্গে তার কোনো পরকীয়া নেই। এছাড়া তিনি স্বীকার করেছেন যে, সম্পা দাসের সঙ্গে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় উভয় শত্রুভাবাপন্ন। অন্যদিকে সম্পা রানী দাস এবং বিজয় দাস মালিপাড়া গ্রামের বিরোধী দুটি দল বা সমাজে বসবাস করেন। এ কারনেও বিভিন্ন সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরস্পরকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। হলি টাইমস অনুসন্ধান করে দেখেছেন যে, সুচিত্রার পরিবারও নানা সময়ে ফৌজদারি অপরাধে যুক্ত ছিলেন। তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ঘাড়াশালের পাড়া মহল্লায় সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে রাস্তাঘাটে পোস্টার লিফলেট ছড়ানো হয়েছে। সুচিত্রার পরিবারও সম্পা এবং তার ছোটবোন সীমা দাসের পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অপরাধে জড়িত এবং বিজয় দাসদের সহযোগিতা করে এমন অভিযোগ উঠেছে। যদিও এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন বিজয় এবং সুচিত্রার পরিবার। 
 
 
সূচিত্রা দাসের পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে এমন পোস্টার ছড়িয়েছিল ঘোড়াশালে :  ছবি সংগৃহিত 
 
 
এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলি টাইমস’কে বলেছেন, বিজয় স্থানীয় যুবলীগের একজন সদস্য। আমরা তাকে সাপোর্ট দেই এটা সত্য। বিজয় দৃশ্যত্ব বড় কোনো অপরাধে জড়িয়ে পরেছে এমন কোনো ঘটনা তাদের জানা নেই। তবে হঠাৎ করে কোটি কোটি টাকার মালিক হলো কি ভাবে সেটি একটা প্রশ্ন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, টায়ার টিউব ব্যবসায় সে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন, এজন্য ছেলেটা এখন ড্যাম কেয়ার মুডে চলাফেরা করে। অনেক’কে অসম্মান করে। টাকা দিয়ে সব কিছু ম্যানেজ করতে চায়।  দলের ছেলে তাই কিছু বলার নেই। 
 
 
 
বিজয় দাসের টায়ার টিউবের দোকান : ছবি : হলি টাইমস 
 
 
বিজয় দাস টায়ার টিউব ব্যবসায় আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার বিষয়টি এখন সমালোচনার মধ্যে পড়েছে। মাত্র কয়েক বছরে এতো বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হওয়ার পেছনে অন্য কোনো গোপন ব্যবসা থাকতে পারে বলে একটি ভিন্ন সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছেন। পূবাইল রেল স্টেশন কেন্দ্রীক যে মাদক বা ইয়াবা ব্যবসা চলছে সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে তার ব্যবসার যোগসূত্র আছে কি-না সেই বিষয়টি গাজীপুরের গোয়েন্দা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। ব্যবসার বিপুল আয়ের সঙ্গে সঙ্গতীপূর্ণ আয়কর , ভ্যাট, ট্যাক্স প্রদান করে কিনা সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংশ্লিস্ট দফতরগুলো। 
হলি টাইমসের একটি অনুসন্ধানী টিম সরেজমিনে খোঁজ নিয়েছেন এই খুনের  চেষ্টার। মামলার নথিপত্র যাচাই, ঘটনার স্থান পরিদর্শন এবং বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন এই টিমের প্রতিবেদকরা। 
ক্রাইম বিভাগের প্রতিবেদক রাজু আহমেদ বলেছেন, সম্পার পরিবার এবং তার ছোট বোন সীমা দাসের পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় একটি চক্র সক্রিয়। এরা যে কোনো প্রক্রিয়ায় এই দুই পরিবারকে হয় উচ্ছেদ নয়তো ভীতির মধ্যে রাখতে চায়। তিনি দেখেছেন, সম্পার স্বামী প্রবাসে থাকায় তার অতীতের চারিত্রিক স্খলনের সুযোগ নিতে চেয়েছেন অনেকে। ব্যর্থ হয়ে তার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটনা এবং ব্লাকমেইলিং করেছেন। মি. রাজু আহমেদ তদন্ত করে দেখেছেন যে, জয় নামের যে ছেলেটার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা বলা হচ্ছে সেটা যতটা না সত্য তার থেকেও বড় মিথ্যা হচ্ছে জয়ের সঙ্গে বিয়ের রেজিস্ট্রি কাগজ তৈরি করা। বিজয় দাস’রা ওই ভূয়া বিয়ের রেজিস্ট্রি কাগজ চারিত্রিক স্খলনের তথ্য প্রমান হিসেবে উপস্থাপন করছেন এবং একটি চক্র ব্ল্যাকমেইলিং করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 
 
 
ব্লাকমেইলিং করার জন্য তৈরি সেই জাল বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার : ছবি হলি টাইমস
 
 
 
যে ভাবে বিয়ের  রেজিস্ট্রি পেপার প্রকাশ্যে এলো :
যিনি এই বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার প্রথম লোকজনকে দেখিয়েছেন সেই সাহাবুদ্দিন এ প্রতিবেদক’কে বলেছেন, প্রায় দুই মাস আগে গভীর রাতে পূবাইল রেলস্টেশনের উত্তর পাশের রাস্তায় পুলিশ দুই ব্যক্তিকে ধাওয়া করে । এর মধ্যে একজন ছিলেন জয়। ধাওয়া খেয়ে ওই দুই ব্যক্তি একটি ট্রাভেল ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যায়। পুলিশ ধারনা করেছিল ওই দুই জনই মাদক বহন করছিল। কিন্তু পুলিশ ব্যাগ থেকে কোনো মাদক পায়নি। ব্যাগটি পুলিশ থানায় নিয়ে গিয়েছিল, সেখানে পুনরায় চেক করার সময় এই বিয়ের  রেজিস্ট্রি কাগজ পায় । সাহাবুদ্দিন নিজেই বলেছেন, পুলিশই তাকে ওই বিয়ের  রেজিস্ট্রি কাগজ দিয়েছে। বানানো এই গল্পে বেশ কিছু অসংগতি  দেখেতে  পেয়েছে এ প্রতিবেদক। পুলিশ কি গভীর রাতে জয়’কে চিনতে পেরেছিল, যদি চিনতে পারে তাহলে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে কেনো চিনতে পারেনি। বিয়ের কাগজ থেকে যদি জয়’কে চেনা যায় তাহলে পরে কোনো তার হদিস বের করলো না। আইন অনুযায়ি পুলিশ কোনো ব্যক্তির, হোক সে অপরাধী বা নিরাপরাধ, তার ব্যক্তিগত কাগজপত্র সাধারন পাবলিকের হাতে তুলে দিতে পারে না। স্থানীয় পুলিশ কেনো এই ভুলটি করবে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে  রেজিস্ট্রি পেপারে বর-কনের যে টিপ সহি দেওয়া হয়েছে তা ছোট বড় । টিপ সহি কারো পক্ষে নকল করা সম্ভব নয়।  উকিল রেজিস্ট্রি পেপারে মার্কার কলম দিয়ে স্বাক্ষর করেছে। এমনটা কোনো উকিল করবে না।  রেজিস্ট্রি বিয়েতে  কমপক্ষে দুই জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হয় । এই বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারে একজন স্বাক্ষীরও নাম নেই স্বাক্ষর নেই। এমনকি কোনো  মেজিস্ট্রেট দ্বারাও সত্যায়িত নয়। এমন ভূয়া বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার কি ভাবে এলো মিজু মোল্লার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাহাবুদ্দিনের হাতে তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।  
এদিকে বিয়ের ভূয়া রেজিস্ট্রি পেপার তৈরি করে স্থানীয় সাহাবুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সম্পা ও তার পরিবারকে ব্ল্যাকমেইলিং করেছে । সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করেছিল ওই চক্রটি। বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপার প্রত্যাখান এবং টাকা দিতে অস্বীকার করায় সম্পার স্বামী লিটন সরকারকে কিশোর গ্যাং দিয়ে মারধর করিয়েছে ওই চক্রটি। এমনকি বেশ কিছু টাকা পয়সাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে ভয়ভীতি দেখিয়ে। বিয়ের ওই ভূয়া রেজিস্ট্রে পেপারগুলো এখন স্থানীয় যুবক সরল, বিজয় দাস, সাহাবুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজনের মোবাইলে সংরক্ষিত রয়েছে এবং সম্পার চরিত্রহননের কাজে ব্যবহার করা হয়।  
হলি টাইমসের ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র রিপোর্টার আবুল কাশেম পূবাইল থানায় দায়ের করা এ সংক্রান্ত একটি জিডি পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি সম্পার পরিবারের অভিযোগ, যে আইনজীবী অনুস্বাক্ষর রয়েছে তা যাচাই করে দেখেছেন যে, একটি চক্র সুপরিকল্পিতভাবেই ওই পরিবারকে হেনস্থা করার জন্য জাল বিয়ের রেজিস্ট্রি সৃজন করেছেন। সম্পার পরিবার সন্দেহ  করেছেন যে, তাদের এক সময়ের পারিবারিক সহমর্মী  মেজবা উদ্দিন মোল্লা ওরফে মিজু মোল্লা এই বিয়ের রেজিস্ট্রি জালিয়াতির মাস্টারমাইন্ড। তার কাছে সম্পার পরিবারের জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কাজের জন্য নেয়া একটি স্ট্যাম্প ছিল,  সেটিই জালিয়াতি করে এই ভূয়া রেজিস্ট্রি তৈরি  করা হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ তাদের।
অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিক আবুল কাশেম জানতে পারেন যে, মিজু মোল্লার সঙ্গে সম্পার পরিবারের ভালো জানাশোনা ছিল। বিভিন্ন কাজে মিজু মোল্লা তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করতো। কিন্তু প্রায় একবছর হলো সম্পার প্রতি মিজু মোল্লার লোলুপ দৃষ্টি পরে। সম্পা অভিযোগ করেছেন,  ফোন করে মিজু মোল্লা প্রায়ই তার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইতো, কথা বলতে চাইতো, ঘুরে বেড়াতে চাইতো এবং কুপ্রস্তাব দিতো। এটা তিনি বরদাস্ত না করায় মিজু মোল্লার সঙ্গে প্রতিবেশিসুলভ সম্পর্ক নষ্ট হয় এবং একই সঙ্গে জমি ক্রয়-বিক্রয় এবং ব্যবসায়িক কারনে মিজু মোল্লা শত্রুতে পরিণত হয়। তখনই প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে মিজু মোল্লা। 
গ্রামের অনেকেই বলেছেন, সুচতুর মিজু মোল্লা সম্পা রানী দাসদের পরিবারকে হয়রানি করতেই তার গ্রামের বিরোধী গ্রুপ বিজয় দাসসহ এলাকায় একটি চক্রকে তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় করে তোলে । তিনি থেকে যান ঘটনার অন্তরালে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দূর থেকেই তার ইশারায় এই চক্রটি সম্পার চরিত্রহরণসহ সব ধরনের প্রপাগান্ডা এবং নানা ক্ষতি করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার আসল লক্ষ্য এই গ্রামের কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে জমিজমা গ্রাস করা। যদিও মিজু মোল্লা এই অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে নাকচ করে দিয়েছেন। বলেছেন, যাদের তিনি এক সময় সহযোগিতা করেছেন তারাই এখন তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। 
 
 
মেজবা ‍উদ্দিন মোল্লা ওরফে মিজু মোল্লা 
 
এছাড়াও  মিজু মোল্লা তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, তার একটি মাত্র  মোবাইল ফোন এবং সে কখনো সম্পা দাস’কে তার মোবাইল থেকে ফোন দিয়ে কুপ্রস্তাব দেননি। গত এক বছরের  মোবাইল কললিস্ট চেক করলেই তার প্রমান পাওয়া যাবে। তিনি এও বলেছেন, সম্পার সঙ্গে বিভিন্ন পুরুষের সম্পর্ক ছিল। তিনি কোনো নিজেকে একজন খারাপ নারীর সঙ্গে জড়াতে যাবেন। সম্পার কোনো স্ট্যাম্প তার কাছে ছিলনা, তিনি জাল বিয়ে রেজিস্ট্রি সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং তিনি কোনো অপরাধী চক্র লালন পালন করেন না। 
তবে সম্পা দাস এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, মিজু মোল্লা নিজের ফোন থেকে কল দিতো না। বিভন্ন লোকের ফোন থেকে কল দিয়ে তাকে কু-প্রস্তাব দিতো। বিশেষ করে অবিনাসের ফোন ব্যবহার করে মিজু মোল্লা তাকে উত্যক্ত করতো।  রাজি নাহলে তার পরিবারের চরম ক্ষতি করার কথা হুমকি ধমকি দিতো। এই বিষয়টি সম্পা দাস মিজু মোল্লার স্ত্রী’র কাছেও অভিযোগ করেছেন বলে জানান। মিজু মোল্লা অন্য মোবাইল থেকে যে সম্পা দাস’কে ফোন দিতো তার একটি অডিও ক্লিপ হলি টাইমসের হাতে রয়েছে। 
 
 
 

 
 একটি অডিও ক্লিপের অংশ থেকে নিয়ে এই ভিডিও ক্লিপটি তৈরি করা হয়েছে। আসল অডিও ক্লিপটি হলি টাইমসের কাছে সংরক্ষিত।  এটা দিয়ে কোনো কিছু প্রমান করা যাবে না। শুধু মিজু মোল্লা যে অন্য ফোন থেকে সম্পা রানী দাসের সঙ্গে কথা বলাতো তার একটি উদাহরণ মাত্র। 
 
কে এই মিজু মোল্লা ? 
দৈনিক হলি টাইমস পত্রিকার ক্রাইম বিভাগের প্রতিবেদক রাজু আহমেদ, স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই তাকে জানিয়েছেন,  একটা সময় মিজু মোল্লা পূবাইল রেল স্টেশনে চা বিক্রি করতো। রেল স্টেশন বাজারে তার ছোট্ট একটি চায়ের দোকান ছিল। পূবাইলে শিল্প কারখানা, রিসোর্ট হওয়ার পর জমির দালালি শুরু করেন তিনি। জমি বেচাকেনার সূত্রে পরিচয় ঘটে মাইলস্টোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল নুরুন নবীর সঙ্গে। মাইলস্টোনের শত শত একর জমি কেনাবেচার সূত্রে মিজু মোল্লা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। এখন তিনি মাইলস্টোনের  স্টেট বা সম্পত্তি ম্যানেজার। মিজু মোল্লা দম্ভ ভরে বলেছেন, মাইলস্টোনের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি সামলান। তার কি টাকার অভাব আছে ? সম্পাকে উদ্দেশ্য করে গালি দিয়ে বলেন, আমিতো উত্তরাতেই মদ খেয়ে পড়ে থাকতে পারি,--- লাগাতে পারি। গ্রামে গিয়ে কেনো এসব করবো ? 
ডোপ টেস্ট করলে মিজু মোল্লার মদ খাওয়া না খাওয়ার বিষয়টি স্পস্ট হয়ে যাবে, যদিও এই রিপোর্টের সঙ্গে  এ বিষয়টি যায় না বলে মনে করেন এ প্রতিবেদক। 
স্থানীয়রা বলেছেন, মিজু মোল্লা গ্রামে এসে অনেক দান-খয়রাত করেন। সমাজ সেবামুলক কাজ করেন। এটা যেমন সত্য তেমনি তার কেউ শত্রু হলে টাকা দিয়ে ভারাটে এনে, পালিত লোকজন দিয়ে অনেক ক্ষতিও করান। পুলিশ তার অনেক অপরাধ সম্পর্কে জানেন। বিভিন্ন মামলা সম্পর্কে জানেন, তবে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। যে কারণে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 
মিজু মোল্লা বলেছেন, তিনি বিজয় দাসের এই খুনের চেষ্টার বিষয়টি জানেন। তবে এর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্তিতা নেই । মিজু মোল্লা এও বলেছেন, যদি সম্পার পরিবার তার সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে বসতে চান তাহলে তিনি বসতে রাজি আছেন। তিনি চান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো খন্ডন করতে এবং প্রতিবেশি সুলভ পরিবেশ বজায় রাখতে।
এদিকে সম্পা দাসের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা রটনাকে নারী নির্যাতন হিসেবেই দেখছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মিজানুর রহমান। তিনি হলি টাইমসকে বলেছেন, স্বামী-স্ত্রী যদি সুসম্পর্কে বসবাস করে এবং স্ত্রীর অতীত কোনো ঘটনা যদি স্বামী মানিয়ে চলে, তবে সেই ক্ষেত্রে বাইরের কোনো লোক কুৎসা রটাতে পারবে না। যদি এটা করে তাহলে সে ফৌজদারি অপরাধ করবে এবং দন্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। 
হলি টাইমসের এই প্রতিবেদক, জিডির তদন্তে থাকা পূবাইল থানার এএসআই সফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন,  কোর্টের অনুমতি পাওয়ার পরই তিনি তদন্ত শুরু করবেন। তার আগে বিজয় দাসের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। তার গোপন ব্যবসা বা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কি না তা তদন্ত করেই বলতে পারবেন। 
পূবাইল থানার অফিসার ইন চার্জ হলি টাইমসকে বলেছেন, ভিকটিমের সুরক্ষা নিশ্চিত থাকবে এবং আইনগত প্রক্রিয়ায় যা হয় তাই-ই করবে পুলিশ।
 
বি:দ্র : এই  প্রতিবেদনের অনেক অডিও ভিডিও প্রকাশনা আইন এবং আইসিটি আইন মেনে  এডিট করে কাঁটছাট করা হয়েছে। এমন কিছু বিষয় কেটে ফেলা হয়েছে যা প্রকাশযোগ্য নয়। তারপরেও কোনো কিছুর অসংগতি কোনো পাঠকের দৃষ্টিতে  এলে হলি টাইমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে আমরা তা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করবো।