চলতি বছরের গত আট মাসে ৪৯৩ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ১০১ জন শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা করা হয়েছে। এদের মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৩২২ জন, গণধর্ষণের শিকার ৭২ জন, প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে ৩৯ জন। এছাড়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৭০ জন শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বেসরকারি সংস্থা জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ‘কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলনে ‘কন্যাশিশুদের সার্বিক অবস্থা: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ২০২১-২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন এবং ‘কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার চিত্র পর্যবেক্ষণ-২০২৩’ উপস্থাপন করা হয়।
চলতি বছরের গত আট মাসে ৩২৯ জন কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ সময়কালে পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে ৩০ জন কন্যাশিশু।
সংবাদ সম্মেলনে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি। মূলপ্রবন্ধে বলা হয়, গত আট মাসে অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে দুইজন, অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ১০৪ জন কন্যাশিশু। বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে ২৬০ জন, আর বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়েছে ২১টি। এছাড়া বাল্যবিয়ে হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকরা স্বীকারোক্তি দেননি এমন কন্যাশিশুর সংখ্যা ১ হাজার ৫২৫ জন। তবে, সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২৩ সালে বাল্যবিয়ের সংখ্যা কমেছে ২৬ শতাংশ।
এছাড়া গত আট মাসে ৪৯৩ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এছাড়া ১০১ জন শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা করা হয়েছে। এদের মধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৩২২ জন, গণধর্ষণের শিকার ৭২ জন, প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে ৩৯ জন। এছাড়া প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৭০ জন শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছরের গত ৮ মাসে ২৬ জন গৃহশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ জন শারীরিক নির্যাতনের শিকার, তিনজনকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
একই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৬ জন শিশু। এছাড়া নানামুখী চাপে আত্মহত্যা করেছে ১৮১ জন। ১৩৬ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর অন্যতম কারণ ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আগে থেকে পারিবারিক শত্রুতার জেরে, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন ইত্যাদি।
এ ছাড়া ১১ কন্যাশিশুকে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে, ৩০৭ শিশু পানিতে পড়ে মারা গেছে, সাপের কামড়ে মারা গেছে ২৭ শিশু এবং ৪৭ জন কন্যাশিশুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
দেশের ৭০টি দৈনিক পত্রিকা এবং মাঠপর্যায় থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। মোট ১৭টি ক্যাটাগরির আওতায় ৭০টি সাব-ক্যাটাগরিতে এসব তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার, আয়োজন সহযোগী সংগঠন গুড নেইবারস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাঈনুদ্দিন মাইনুল, সেভ দ্যা চিল্ড্রেন ইন বাংলাদেশের হেলথ অ্যান্ড নিউট্রেশন সেক্টরের কর্মকর্তা ড. লিমা রহমান, চাইল্ড রাইটস স্পেশালিস্ট অ্যান্ড অ্যাক্টিভিস্ট টনি মাইকেল গোমেজ, এডুকো বাংলাদেশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন৷
অনুষ্ঠানে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে ৯টি সুপারিশও করেছে অ্যাডভোকেসি ফোরাম।