অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অনিয়ন্ত্রিত মাদক সেবন এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণের কারণে হৃদরোগ, ষ্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়বেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ তে রোগ প্রতিরোধকে প্রাধান্য দেয়া হলেও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মূলত চিকিৎসা কেন্দ্রিক। যার ফলে দিন দিন মানুষের মাঝে রোগ বেড়ে যাচ্ছে। অথচ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন”, যা নেপাল, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সুইজারল্যান্ড, আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ব্র“নাই, কানাডা, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর ২৩টি দেশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং আরও অনেক দেশে প্রক্রিয়াধীন। বাংলাদেশে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মৃত্যুঘাতি তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% স্বাস্থ্য কর আরোপ করা হয়েছে। সেই অর্থে রোগ প্রতিরোধের জন্য সদ্ব্যবহারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, তদারকি ও মূল্যায়নে একটি স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে “হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন” গঠন সময়ের দাবি। ৬ মে, ২০১৫; সকাল ১১টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে ‘তামাকজাত দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত সারচার্জের অর্থে রোগ প্রতিরোধে হেলথ প্রোমোশন ফাউন্ডেশন চাই’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচীতে এ অভিমত ব্যক্ত করেন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ উন্নয়নে কর্মরত ২০ টি সংগঠন।
কমর্সূচিতে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন আঞ্চলিক পরামর্শক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) স্বাস্থ্য বিভাগের উপদেষ্টা ড. মোজহারুল হক, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দি ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মহবুবুল আলম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-এর অনুষ্ঠান বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিলন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সম্পাদক, মঞ্জুর হাসান দিলু, একলাব-এর প্রকল্প সমন্বয়নকারী মাকসুদ উল্লাহ প্রমুখ। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট পরিচালক (প্রশাসন) গাউস পিয়ারি মুক্তি’র সভাপতিত্বে কর্মসূচী পরিচালনা করেন সংস্থার ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন।
অধ্যাপক ড. মোজহারুল হক বলেন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আমাদের রোগ প্রতিরোধে বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া প্রয়োজন। দেশে সকলের রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের কোন বিকল্প নেই। তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% স্বাস্থ্য কর আরোপ করা হয়েছে। এতে করে বিপুল পরিমান অর্থ পাওয়া যাবে। যে অর্থ স্বতন্ত্র একটি ফাউন্ডেশনের অধিনে পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা হলে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এড. সৈয়দ মহবুবুল আলম বলেন, থাইল্যান্ডের হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন আমাদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। এর আলোকে বাংলাদেশেও হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা দরকার। এ সংস্থা স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিতভাবে প্রতিষ্ঠা হলে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশেও পিকেএসএফ, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি ফাউন্ডেশন সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করি, সরকার জনহিতকর এ দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করবে।
মিহির বিশ্বাস ক্ষতিকর তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% স্বাস্থ্যকর আরোপ করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ অর্থের সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষতিকর পণ্যের উপরও আলাদাভাবে স্বাস্থ্যকর আরোপ করা দরকার। রফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রাধান্য পাচ্ছে না। তাই রোগ প্রতিরোধে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা জরুরি।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন জালালাবাদ ফাউন্ডেশন-এর প্রধান নির্বাহী এনাম আহমেদ, মাধবিকা’র সংগঠক আব্দুল রাজ্জাক, ইউনাইটেট পিপলস ট্রাষ্ট-এর প্রধান নির্বাহী আলী হাজারী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষণা সেল (টিসিআরসি) এর গবেষক মো. মহিউদ্দিন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর কো- অডিনেটর আতিক মোর্শেদ, বি-স্ক্যান সদস্য কামরুজ্জামান, মানবিক এর তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সুমন শেখ, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন-এর সদস্য আকিব দিপু প্রমুখ।