Contact For add

Tue, May 14 2013 - 12:00:00 AM +06 প্রচ্ছদ >> আইন

Pioneer Peshkar constable wrote a corruption order in the lower court of Dhaka, signed the judgeঢাকার নিন্ম আদালতে দুর্নীতি আদেশ লিখেন পিয়ন পেশকার কনস্টেবল, সই দেন বিচারক

ঢাকার নিন্ম আদালতে দুর্নীতি আদেশ লিখেন পিয়ন পেশকার কনস্টেবল, সই দেন বিচারক

হলিটাইম্‌স ডটকম

ঢাকা জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, সিএমএম ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রায় সব মামলার ক্ষেত্রে আদেশ লিখেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পিয়ন, পেশকার, উমেদার, জিআর সেকশনের কনস্টেবল এবং জিআরও। পরে সেসব লিখিত আদেশের নীচে বিচারক কেবল স্বাক্ষর করেন।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে শুনানির পূর্বে বিচারকের জন্য শুধু আদেশই লিখে রাখেন না পরবর্তী তারিখও ধার্য করে দেন ওইসব পিয়ন, পেশকার, উমেদার এবং জিআরও সেকশনের কনস্টেবলরা। সংশ্লিষ্ট মামলার অভিযোগে বা আরজিতে কোথায় কী আইনগত ফাঁক আছে, আইনজীবী শুনানিতে কী বলবেন এবং বিচারক ওই বিষয়ে কী আদেশ দিবেন তা কীভাবে ওইসব পিয়ন, পেশকার ও কস্টেবলরা আগে থেকেই জানেন তা রীতিমতো বিস্ময়ের ব্যাপার।

বিস্ময়ের মাঝেই লুকিয়ে আছে দুর্নীতির বীজ। বিভিন্ন আাদালত ও জিআর সেকশনে ঘুরে এই একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। আর এজন্যই আইনজীবী থেকে শুরু করে বিচারপ্রার্থীরা এসব অঘোষিত ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের তোয়াজ করে চলেন। নানাভাবে তাদেরকে রাজী-খুশি করার চেষ্টা করেন সবাই। কারণ তাদের কলমের খোঁচাতেই হতে পারে বড় কোনো লাভ বা ক্ষতি। এসব পিয়ন, পেশকার এবং কনস্টেবল একই সাথে বরের মাসী এবং কনের পিসী।

সবার কাছ থেকেই তারা উৎকোচ নেন। যে যতো বেশি দেন তাদের পক্ষেই যায় রায়। এছাড়াও টাকায় চলে মামলার ফাঁক ফোকর জেনে নেয়া, সুবিধা মতো তারিখ ধার্য করাসহ আরও নানারকম সুবিধা। এসব পিয়ন, পেশকার, উমেদার ও কনস্টেবলদের আছে অত্যন্ত শক্তিশালী আন্তঃআদলত নেটওয়ার্ক। ফলে সব আদালতের চিত্রই একরকম। এমনকি তারা অর্থের বিনিময়ে পক্ষদের নথি গুম করে রাখে।

নথি খুঁজে না পাওয়ায় অনেকে নারাজী দাখিল কিংবা রিভিশন বা রিভিউ আবেদন করতে পারেন না। একপক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অন্যপক্ষকে ঘায়েল করার জন্যই এসব করা হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ আঠারো মাস পর্যন্ত ঢাকার সিএমএম আদালতে নথি লুকিয়ে রাখার মতো ঘটনারও প্রমাণ আছে। পরে বাধ্য হয়ে ঢাকার সিএমএম’র সাহায্য নিয়ে নথি বের করতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট মামলার আইনজীবীকে।

আবার কখনও পক্ষদের অনুপস্থিতি সত্বেও তারা হাজির আছেন মর্মে নথিতে উল্লেখ করে দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নথি থেকে সময়ের আবেদন সরিয়ে ফেলে হাজিরা দেখিয়ে দেন আদেশের মধ্যে। এছাড়া ভুয়া বাদী সাজিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলায় আইনজীবীর বিকৃত সিল দেয়া, হাজিরা, ওকালতনামা ও পিটিশন গ্রহণ করার নজিরও আছে ঢাকার সিএমএম আদালতে।

এর মধ্যে দু-একটি আদালতের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। তাও কেবল ওইসব আদালতের বিচারকদের ব্যক্তিগত সততার কারণে। এসব বেআইনি কাজের কথা সবই জানেন ওইসব আদালতের বিচারকরা। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যেন সুযোগটা তারাই দিয়ে রেখেছেন। এতে সুবিধা হলো কাজের চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। আরও যেসব সুবিধার কথা শোনা যায় দুষ্টলোকদের সেসব কথার দিকে কান না দেয়াই ভালো। অনেক আদালতে কোনো পেশকার নেই। আছে প্রসেস সারভার (চিঠিপত্র বিলিকারী)।

তারাই করেন পেশকারের কাজ। পেশকাররা থাকেন নকলখানায়। কারণ সেখানে কম পরিশ্রমে আরও বেশি অবৈধ উপার্জনের সুযোগ আছে। এসব পিয়ন, পেশকার এবং জিআর সেকশনের কনস্টেবল এবং জিআরওদের জবাবদিহিতার কিছুটা সুযোগ থাকলেও উমেদারদের কোনো প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা কোনো সরকারি কর্মচারী নয়। তাদের কাজের কোনো বৈধতা নেই।

তাদের নিয়োগ দেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জিআরও এবং ম্যাজিস্ট্রেট। এরা তাদের পকেটের লোক বলে পরিচিত থাকেন। এদের নির্দিষ্ট কোনো বেতনও নেই। দুর্নীতিই এদের আয়ের উৎস। যার কাছ থেকে যেভাবে খুশি তারা আয় করতে পারেন। এখানে বেতন না পেয়েই তারা খুশি থাকেন। শুধু একটা চেয়ার থাকলেই হলো। শুধু নিয়োগকর্তাদের খুশি করলেই চলে তাদের। আর তাদের নিয়োগকর্তাদের খুশি করার জন্য তারা যে কাউকেই অখুশি করতে দ্বিধা করেন না।

এসব পিয়ন, পেশকার, উমেদার, কনস্টেবল এবং জিআরওদের আদেশ লিখে দেয়ার কোনো সুযোগ আছে কী-না এবং এটি আইনসিদ্ধ কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান  বলেন, ‘আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক ব্যতীত অন্য কেউ আদেশ লিখতে পারবেন না।’

এসব অনৈতিক কাজ কীভাবে বন্ধ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই আইনজীবী বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ব্যতীত অন্য কাউকে আদালতের কোনো ধরনের কাজে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এটা বন্ধ করতে পারলেই অনৈতিক কাজ অনেকটাই দূর হবে। এছাড়া বিচারকের আদেশ অন্য কাউকে দিয়ে লেখানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

মামলার পরবর্তী তারিখ দেয়ার কাজটিও বিচারকের হাত দিয়েই হতে হবে।’ ‘আইনজীবীর দাখিল করা ওকালতনামা, হাজিরা, পিটিশনে আইনজীবীর সিল সুস্পষ্ট কিনা তা দেখে জমা নিতে হবে। নথি থেকে কোনো কিছু হারানো গেলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে হবে। যতদিন এদের দৌরাত্ম্য এবং এসব বেআইনি কাজ বন্ধ করা না যাবে ততদিন বিচার বিভাগের কাগুজে পৃথকীকরণের সুফল বিচারপ্রার্থী তথা জাতি কখনওই পাবে না।’ তাই এদিকে দৃষ্টি দেয়া এখন সময়ের দাবি বলে অ্যাডভোকেট আজাদ রহমান দৃঢ়ভাবে বলেন।



Comments

Place for Advertizement
Add